চোখে দেখেন না মিরাজুল, ১৪ বছর ধরে পড়াচ্ছেন কোরআন
মুহাম্মাদ তাওহিদুল ইসলাম, পিরোজপুর || রাইজিংবিডি.কম
১৪ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান মিরাজুল ইসলাম (৩৪)। কিন্তু মনোবল হারাননি তিনি। ইচ্ছেশক্তিতে বলিয়ান হয়ে শুধু শ্রবণশক্তির মাধ্যমে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়। আল্লাহর মহান বাণী প্রচারকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। গত ১৪ বছর তিনি কোমলমতি শিশুদের কোরআন শরীফ পড়াচ্ছেন।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের দেবত্র গ্রামের আবুল হোসেনে ছেলে হাফেজ মিরাজুল ইসলাম। আবুল হোসেন পেশায় কৃষক ছিলেন। তার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় মিরাজুল।
জানা গেছে, মিরাজুলের বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর, তখন টাইফয়েড জ্বর হয়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এরপর সুস্থ হলেও তিনি ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এরপর বাঁ চোখের দৃষ্টিও চলে যায়। তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। বাবা চাইতেন, মিরাজুল কোরআনে হাফেজ হবে।
মিরাজুল স্থানীয় দাউদখালী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। অসুস্থতার কারণে আর মাদ্রাসায় যেতে পারেননি। ২০০৮ সালে যশোর দারুল সালাম কমপ্লেক্সে তিন বছর ধরে শুনে শুনে তিনি পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। সেখানে ২০১১ সালে তিনি হাফেজ খেতাব পান। ২০১৭ সালে চালিতাবুনিয়া ছলেহীয়া হামিদিয়া দীনিয়া ও হাফিজি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মাত্র ছয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। শুরু করেন শিক্ষক জীবন। তিনি কয়েকশ ছাত্রকে কোরআন শিখিয়েছেন। তার হাতে ছয়জন ছাত্র হাফেজ হয়েছেন।
হাফেজ মিরাজুল ইসলাম জানান, ছোটবেলায় কোরআন শেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। কোথাও কোরআন তেলাওয়াত শুনলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করতাম আল্লাহ যেন একদিন কোরআনে হাফেজ বানান। আল্লাহ দোয়া কবুল করেছেন।
এখন বাচ্চাদের কোরআন তেলাওয়াত শেখাতে পারছি- এ আমার পরম ভাগ্য! আমাদের মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন মোট চারজন। মাদ্রাসায় এখন ৪৫ জনের মতো ছাত্র আছে। এর মধ্যে তিনজন এতিম ও তিনজন হাফেজ।
মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ আবু সাঈদ জানান, হুজুর অন্ধ হলেও শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত ভালো। তার শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি খুবই প্রখর ও নির্ভুল। হুজুর আমাদের যত্ন সহকারে কোরআন শিক্ষা দেন।
চালিতাবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল শাহেদ আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা তাকে ‘অন্ধ হুজুর’ হিসেবে চেনেন। চোখে না দেখেও শিশুদের কোরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন ১৪ বছর ধরে। আমাদের এখানে শেখাচ্ছেন ৮ বছর।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবুল কালাম বলেন, হাফেজ মিরাজুল ইসলামের প্রতিটি কাজে মাদ্রাসার ছাত্ররা তাকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে। প্রতিদিনের কাজ তো বটেই, এমনি কোথায় বেড়াতে গেলেও ছাত্ররা তাকে সহযোগিতা করে।
/ইমন/