ঢাকা     শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১

খুলনাঞ্চলে অরক্ষিত রেলস্টেশন, বেপরোয়া ছিনতাই-মাদকসেবী চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৫ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৯:৫১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
খুলনাঞ্চলে অরক্ষিত রেলস্টেশন, বেপরোয়া ছিনতাই-মাদকসেবী চক্র

খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন রেলস্টেশনে যাত্রীদের ফোন, লাগেজ, মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনে দুপুরে রেলের যাত্রী ছাউনিতে মাদক সেবন করতে দেখা যায় হরহামেশা। এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ করেছেন যাত্রী ও স্টেশনে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। মোহাম্মদনগর স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে কেউ না থাকায় স্টেশনটি পুরোপুরি অরক্ষিত। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খুলনা স্টেশনের কম্পাউন্ডের ভেতরে যেখানে কোনো ধরনের যানবাহন রাখা নিষেধ সেখানে এলোমেলোভাবে ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল পার্ক করা। স্টেশনের ভেতর যাত্রীদের বিশ্রামাগারের চেয়ারে পাগল শুয়ে আছে। ভেতরে মোটরসাইকেল পার্ক করে রেখেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ট্রেন আসলে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয় সেখানে। স্টেশনের ভেতর থেকে যাত্রীদের বের হওয়ার পথে জটলা পাকিয়ে রাখা থাকে অটো। প্লাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বসার জায়গাগুলো শুয়ে বসে আছে বহিরাগত, পাগল, মাদকাসক্ত।

সূত্রমতে, জিআরপি পুলিশের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২০ অক্টোবর তিন বোতল ভ্যাট সিক্সটি নাইন বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়, কিন্তু কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এদিকে চলতি বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খুলনা রেলওয়ে থানায় পাঁচটি ছিনতাই ও চুরির ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে, যা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। 

এছাড়া খুলনা-মংলা-বেনাপোল রুটের মোহাম্মদনগর স্টেশনে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটছে। স্টেশনটি চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। স্টেশন সংলগ্ন রেল ক্রসিং পয়েন্টের নাট, ক্লাস, লক, পয়েন্টের হ্যান্ডেল, জানালার থাই গ্লাসসহ বিদ্যুতের বাল্ব চুরি হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে কেউ নেই। এক প্রকার অরক্ষিত মোহাম্মাদ নগর স্টেশনটি। সেখানে কর্মরত কর্মচারীরা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন।

খুলনা স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জিআরপি পুলিশের সদস্যরা জানান, এতো বড় স্টেশনে মাত্র কয়েকজনের পক্ষে দেখাশুনা করা কঠিন। স্টেশনের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রবেশ করা যায়। কোনো মাদকসেবীকে একপাশ থেকে তাড়া দিলে কিছুক্ষণ পর অন্য পাশ দিয়ে আবার প্রবেশ করে। তাছাড়া অনেক মানুষ আইন মানতে চায় না। পার্কিং নিষিদ্ধ এরিয়াতেও তারা পার্কিং করবে, রেল আসলে গাড়ির জটলা পাকিয়ে রাখে যাতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে। অল্প লোকবল হলেও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করি। সাধারণ মানুষ সহযোগিতা না করলে শৃঙ্খলা আনা কঠিন। পাশাপাশি আশেপাশের অপ্রয়োজনীয় প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করতে পারলে মাদকসেবী, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম কমবে।

খুলনা থেকে ঢাকাগামী ট্রেনের যাত্রী আশরাফুল ইসলাম বলেন, খুলনাবাসীর জন্য এতো সুন্দর রেলস্টেশন হয়েছে কিন্তু পরিবেশটা প্রথমের দিকের মত নেই। স্টেশনের ভেতর ছিন্নমূল কিছু লোকজন শুয়ে বসে আছে। অনেককে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘুরতে দেখা যায়। যা পুরুষ-নারী সবাইকে বিব্রত করে।

খুলনা রেলওয়ের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মাসুদ রানা বলেন, মাঝে মধ্যে চুরি ছিনতাই হয় শুনেছি। অনেক সময় বহিরাগত পাগল, মাদকসেবী স্টেশনের ভেতরে এসে শুয়ে বসে থাকে। এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

স্টেশনে টিকিট কাটতে আসা আরিফুল ইসলাম বলেন, স্টেশনে দেখলাম ভিখারিদের আনাগোনা, উৎপাত। সিঁড়ির কাছে পুলিশের একজন চুপ করে বসে আছেন।

স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম পরিস্থিতি স্বীকার করে বলেন, লোকবলের অভাবে মূলত আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। তিনি বলেন, শিফট অনুযায়ী পুলিশের টহলের দায়িত্বে থাকে ৪ থেকে ৫ জন। এতো বড় স্টেশনের এতো অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে দেখভাল করা কঠিন।

খুলনা রেলওয়ের থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদাউস আলম খান বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। আমাদের কাছে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে, মামলাও হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি। জনবল সংকট থাকায় সার্বিক বিষয় দেখভালে কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে, তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়