ঢাকা     রোববার   ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২ ১৪৩১

মধুমতিতে কচুরিপানা, গোপালগঞ্জের সঙ্গে ৫ জেলার নৌ চলাচল বন্ধ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ১৭ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৪:৪৪, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
মধুমতিতে কচুরিপানা, গোপালগঞ্জের সঙ্গে ৫ জেলার নৌ চলাচল বন্ধ

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালেঙ্গা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী শহীদ মোল্যা। মধুমতি নদী দিয়ে নৌকায় করে মাছ বিক্রি করতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উফরির সাপ্তাহিক হাটে মাছ বিক্রি করতে আসেন। বরাবরের মত শনিবারের হাটেও এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার আর হাটের কাছে নয় থামতে হয়েছে হাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। কারণ, কচুরিপানা।

শহীদ মোল্যা বলেন, ‘মানিকহার সেতুর নীচে মধুমতি নদীতে কচুরীপানার কারণে নৌকা নিয়ে সরাসরি হাটে যেতে পারিনি। ১ কিলোমিটার দূরে নৌকা থামতে হয়েছে। এতে মাছ মাথায় করে ও ভ্যানে করে হাটে নিতে হয়েছে। ফলে আমার যেমন সময় নষ্ট হয়েছে, তেমনি অর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’ 

মধুমতি নদীতে কচুরিপানার বিস্তার ঘটায় ৫ জেলার সঙ্গে ১৫ দিন ধরে নদীপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনায় খাদ্য, নির্মাণ সামগ্রী, জ্বালানি, কৃষি পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী পরিবহণ ব্যহত হচ্ছে।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার ব্রিজ এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় ভাগে ছয় গুচ্ছ পিলারের মাধ্যমে মধুমতি নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। প্রতিটি গুচ্ছে ফাঁকা ফাঁকা ছয়টি করে মোট ৩৬টি পিলার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ সেট পিলারের অবস্থান নদীর পানিতে।

এসব পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কচুরিপানা ঢুকে আটকে গেছে। জমতে জমতে তা ব্রিজের নিচ থেকে বিস্তৃতি লাভ করেছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। বিশাল এ এলাকাজুড়ে কচুরিপানার বিস্তার ঘটায় চলাচল করতে না পারায় নদীতে নোঙর করে আছে অসংখ্য নৌকা, ট্রলার ও কার্গো।

এদিকে, কচুরীপানা জমে যাওয়ায় ওখানকার পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ার পাশাপশি পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে চর্ম রোগসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। এমনকি বেড়েছে সাপের উপদ্রব। গত শুক্রবার ৫টি ও শনিবার ৪টি সাপ মেরেছে স্থানীয়রা। এতে এলাকায় সাপ আতংক দেখা দিয়েছে।

এ ঘটনা জানার পর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন ও গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

মালেঙ্গা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী শাহাদাত ফকির বলেন, ‘নৌকায় করে মাছ বিক্রি করতে এসেছিলাম। কিন্তু মানিকহার এলাকার বাজারের যাওয়ার আগে ১ কিলোমিটার দূরে নৌকা রাখতে হয়েছে। এখন মাথায় করে মাছ নিয়ে হাটে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত মধুমতি নদী থেকে কচুরীপানা সরানোর দাবি জানাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী শওকত খাঁ বলেন, ‘মধুমতি নদীর মানিকহার ব্রিজ থেকে ১ কিলোমিটার পযর্ন্ত কচুরিপানা জমেছে। এতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে আমরা মালামাল আনা নেওয়া করতে না পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।’ 

বরিশালের সবজি ব্যবসায়ী শাওন মোল্লা বলেন, ‘এখন শীতের সবজির চারা বিক্রির ভরা মৌসুম চলছে। বরিশাল ও পিরোজপুর থেকে নৌকায় করে লাউ, কুমড়া, সিম, বেগুন ফুলকপি, বাধাকপিসহ বিভিন্ন সবজির চারা এনে গোপালগঞ্জে বিক্রি করি। কিন্তু কচুরিপানার কারণে নৌকা গোপালগঞ্জ শহর ও আশপাশের গ্রামের হাট বাজারে নিতে পারছি না। এতে ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।’ 

স্থানীয় যুবক জাহিদুল খান বলেন, ‘আগে সরাসরি নৌকায় করে উরফি হাটে আসা যাওয়া যেতো। কিন্তু কচুরিপানা হওয়ায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার ঘুরে যোগানিয়া হয়ে যাতায়েত করতে হচ্ছে। এমনকি কচুরীপানা হওয়ায় ওখানকার পানি পচে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ার পাশাপশি পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।’

স্থানীয় গৃহবধূ নাসিমা বেগম বলেন, ‘মধুমতি নদীর এখানে কচুরিপানা হওয়ায় এখানে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গত শুক্রবার ৫টি ও শনিবার ৪টি সাপ মারা হয়েছে। এতে আমরা সাপ আতংকে আছি।’

কার্গো চালক বশির মিয়া বলেন, ‘এই নদী দিয়ে আমরা ধান চালসহ বিভিন্ন পণ্য খুলনা ও বরিশালে পরিবহন করি। কিন্তু মানিকহার ব্রিজের নিচে জমে থাকা কচুরিপানার ওপর দিয়ে কার্গো চালাতে পারছি না। তাই মানিকহার ঘাটে কার্গো নোঙর করে বসে আছি। এতে আমাদের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে।

উরফি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মিজানুর রহমান বলেন, ‘গুচ্ছ পিলারের উপর ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কচুরিপানা ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি করে। এমনকি কচুরিপানার স্তূপের উপর দিয়ে এখানে ঘুরতে আসা উৎসুক জনতা চলাচলও করেন। দুই বছর আগেও এ অবস্থা হয়েছিল। তখন সরকারি উদ্যোগে এটি অপসারণ করা হয়। এখন আবার একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এত নৌপথে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’ 

উরফি ইউপির চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, ‘জেলার প্রধান নদী মধুমতি দিয়ে পাঁচ জেলায় প্রতিদিন অন্তত ২শ নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল করে। কিন্তু কচুরিপানার কারণে ১৫ দিন ধরে নৌ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহন ও নৌচলাচল ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া ব্রিজেরও ক্ষতি হচ্ছে।’

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রিফাত জামিল বলেন, ‘বিষয়টি আমি লিখিত ও মৌখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কচুরি অপসারণে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। টাকা বরাদ্দ বা অনুমোদন পেলেই আমরা এটি শুরু করতে পারব।’ 

ঢাকা/বাদল/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়