মুক্তি চেয়ে অনশনরত ২ আসামি কারাগারের হাসপাতালে: জেল সুপার
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
খুলনা জেলা কারাগার। ফাইল ফটো
দুই মামলায় ৩০ বছর সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি মুক্তির দাবিতে গত ৮ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন। দুর্বল হয়ে পড়ায় তাদের খুলনা জেলা কারাগার হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. নাসির উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেল সুপার নাসির উদ্দিন জানান, মুক্তির দাবিতে গত ১০ নভেম্বর থেকে দুটি মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র নূর মোহাম্মদ অনিক ওরফে নূর ও মো. মোজাহিদুল ইসলাম খুলনা জেলা কারাগারে আমরণ অনশন শুরু করেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তাদের কারাগার হাসপাতালে রেখে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা খাবার খাচ্ছেন না।
তিনি আরো জানান, বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক ও কারাবিধি অনুযায়ী আদালতকে অবহিত করেছেন। তাদের (অনশনরত আসামি) বিরুদ্ধে আরো তিনটি মামলা রয়েছে।
অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু বলেন, “দ্রুত ভালো চিকিৎসা না করালে তাদের বাঁচানো সম্ভব নাও হতে পারে। আইনজীবী হিসেবে তাদের আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি- কিন্তু তাদের সাফ কথা ‘হয় আমাদের মুক্তি দিতে হবে, নয় লাশ হয়ে কারাগার থেকে বের হবো’।”
নূর মোহাম্মদ অনিক ওরফে নূর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও মো. মোজাহিদুল ইসলাম পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অনিক মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার মোড়াবাড়ি গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে এবং মোজাহিদুল ইসলাম বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ঘাগুর দুয়ার গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে।
খুলনার জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন গত ১৪ নভেম্বর খুলনা মহানগর দায়রা জজ বরাবর প্রেরিতপত্রে উল্লেখ করেন, ‘উক্ত বন্দিদ্বয়কে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে খুলনা জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় দায়েকৃত বিস্ফোরক মামলায় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত কর্তৃক ২০২২ সালের ২২ মে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া সোনাডাঙ্গা থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ১০ বছর সাজা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।’
খুলনা জেলা কারাগারের সুপার পত্রে আরো উল্লেখ করেন, ‘গত ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর গত ২২ সেপ্টেম্বর উক্ত বন্দিদ্বয় কর্তৃপক্ষের নিকট জানান যে, তারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এরপর দীর্ঘ ১৭ দিন বগুড়া ডিবি হেফাজতে নিয়ে গুম করে নির্যাতনের পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের কট্টর সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলার কারণে তারা প্রহসনের মামলার শিকার হয়েছেন।
বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও তারা কারাগারে এখনো আটক থাকায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং সাজাভোগ করছেন। তাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কারাগার থেকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা না করায় কারাগারে গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রথমবার অনশনের হুমকি দিয়ে সরকারি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন।
ওই সময়ে তাদের আগ্রহ অনুযায়ী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করিয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক করানো হয়। তবে কারাগার থেকে এখনো মুক্তি না পাওয়ায় তারা একই দাবি তুলে গত ১০ নভেম্বর হতে পুনরায় সরকারি খাবার গ্রহণ করা হতে বিরত রয়েছেন।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কারাগারে অনশনরত খুবির দুই ছাত্রের ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়েছে। কারাবিধি (জেল কোড) অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আসামির স্বজন জানান, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি আটক করার ১৭ দিন পর ২৫ জানুয়ারি তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তৎকালীন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির গণমাধ্যমে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করেন। সেসময় পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওই দু’জন নব্য জেএমবির সদস্য। তাদের কাছ থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানা কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার সামনে বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে এই দুইজন জড়িত ছিলেন। বোমা তৈরির উপকরণ তারা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতেন। তারা নব্য জেএমবি সদস্য।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ