মালিকানা দ্বন্দ্বে বন্ধ আরনু জুট মিল, দিশেহারা শ্রমিক

মালিকানার দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে গেছে দিনাজপুরের হিলি আরনু জুট মিলস লিমিটেড। এতে দিশেহারা পড়েছেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। উপার্জন বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে তাদের পরিবার। এদিকে, মিলের মালিকানা নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন অংশীদাররা।

হিলি পৌর এলাকার ডাঙ্গাপাড়ায় অবস্থিত মেসার্স আরনু জুট মিলস লিমিটেডের অংশীদার তিন ভাই-বোন। তারা হলেন— চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম আজাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ সাফি হাজী ও পরিচালক নুরুন নাহার আহমেদ আরনু। 

আরনু জুট মিলে কাজ করেন ৭০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক। এমডি সাফি হাজী প্রায় ২৫ দিন ধরে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। কাজ ফিরে পাওয়ার আশায় আছেন তারা। কারখানা সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এর চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর। 

জোবায়ের, নজরুলসহ কয়েকজন শ্রমিক বলেছেন, ‘‘২৫ দিন আগে আমাদের এই জুট মিল বন্ধ করে দিয়েছেন এমডি স্যার। আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। মিলে কাজ করে আমরা যা উপার্জন করতাম, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চালিয়েছি। ২৫ দিন ধরে কাজ না থাকায় সংসার অচল হয়ে গেছে। আমরা চাই, জুট মিল আবার চালু হোক।’’

কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে বসে আছি। বসে থাকলে জীবন চলবে কী করে? সংসারে খরচ আছে, ঋণের কিস্তি চালাতে হয়। মালিক যে কী কারণে মিল বন্ধ করে দিলো, জানি না। মিলটা খুললে আমাদের ভালো হয়।’’

হিলি শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি সবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আরনু জুট মিলে ৭০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। এমডি সাফি হাজী ২৫ দিন ধরে মিল বন্ধ রেখেছেন। শ্রমিকরা অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। আমি মিলটি দ্রুত চালু করা আহ্বান জানাচ্ছি।’’

হিলি পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেছেন, ‘‘আরনু জুট মিলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এটা কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে। এই মিলের অনেক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। আমি মিল মালিকদের সাথে কথা বলে মিলটি চালু করার চেষ্টা করছি।’’ 

আরনু জুট মিলের পরিচালক নুরুন নাহার আহমেদ আরনু বলেন, ‘‘আমি আর আমার বড় ভাই বিদেশি থাকি। কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম, আমার ভাই সাফি হাজী মিলটি বন্ধ করে দিয়েছে। কেন সে মিল বন্ধ করে রেখেছে, সেটি জানি না। আমরা তা জানার জন্য দেশে ফিরে এসেছি।’’

জুট মিলের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম আজাদ বলেন, ‘‘দেশে ফিরে দেখি, মিলটি বন্ধ করে রেখেছে। ২৫ দিন থেকে বন্ধ। এতে অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। আবার সে (এমডি সাফি হাজী) আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমরাও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছি। মিল বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা মিলের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করি। তাতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। আগামী শনিবার আমরা মিল চালু করব।’’ 

মিল কেন বন্ধ আছে, জানতে চাইলে আরনু জুট মিলের এমডি শেখ সাফি হাজী বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে আমার ভাই-বোন মিলের কার্যক্রম চালিয়েছেন। কিন্তু, তারা ব্যাংকের কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। এই জুট মিলের তারা ৬০ শতাংশ অংশীদার আর আমি ৪০ শতাংশ। তারা বিদেশে থাকে। ব্যাংক মিলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাহলে, আমি কেন একা এর দায়ভার নেবো? এ কারণে মিল বন্ধ রেখেছি।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি যে ৭ কোটি টাকার এক্সটেনশন নিয়েছি, সেটি দিয়ে দিক। আমাকে মিলে না রাখতে চাইলে আমার যে ৪০ ভাগ শেয়ার আছে, তা ফেরত দেওয়া দিক। তারা এটাতে রাজি নয়। তারা শনিবার থেকে জোর করে মিল চালু করবেন।’’ 

এ বিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) থানার অফিসার ইনচার্জ সুজন মিঞা বলেছেন, হিলির আরনু জুট মিলটি কিছু দিন ধরে বন্ধ আছে। এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। মিলের অংশীদার তিন ভাই-বোন। তারা পাল্টাপাল্টি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তারা যেহেতু আপন ভাই-বোন, নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করছেন।’’