ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

শহিদ সূর্য ছিলেন মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৩ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১১:০৩, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
শহিদ সূর্য ছিলেন মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন

শহিদ সূর্যের মা রাজিয়া সুলতানা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে যোগ দিয়ে গত ৫ আগস্ট দিনাজপুরের হিলিতে শহিদ হন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সূর্য (১৫)। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তবে, সূর্যকে নিয়েই সব আশা-ভরসা ছিল তার মায়ের।

শহিদ সূর্যের বাড়ি দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের রাজিয়া সুলতানার ছেলে। সূর্য যখন খুব ছোট, তখন তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে মা রাজিয়া সুলতানা স্থানীয় জুট মিলে কাজ করে সংসার চালান।

রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘‘সবাই বলে, আমার সূর্য নাকি মারা যায়নি; সে নাকি সবার মাঝে বেঁচে আছে। কিন্তু, কই কারো মাঝে তো আমার বুকের ধনকে খুঁজে পাই না। ৪ আগস্ট সকালে ছেলে বলল, মা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যাচ্ছি। আমি বলেছিলাম, বাবা সাবধানে থেকো। সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে এসো। কিন্তু, সেদিন আর ছেলে ফিরে এলো না, ফিরল পরের দিন পোড়া লাশ হয়ে।’’

আরো পড়ুন:

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘‘সূর্য ছিল আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু, গত ৫ আগস্ট ছেলের সঙ্গে পুড়ে গেছে আমার স্বপ্ন; বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। ৪ আগস্টের পর আমার আকাশে আর সূর্য উঠেনি।’’

প্রতিবেশী ইয়াসমিন আক্তার নামে এক নারী বলেন, ‘‘৪ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন সূর্য। তবে, সেদিন আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। সারাদিন অপেক্ষার পরেও ছেলে না ফেরায় রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন তার মা রাজিয়া সুলতানা। কিন্তু, ছেলের সন্ধান পাননি। পরের দিন পৌর মেয়রের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত ১০টার দিকে খবর আসে, সেই পোড়া বাড়ি থেকে সূর্যের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।’’

শহিদ সূর্যের নামে একটি সড়ক নামকরণ করা হয়েছে


এলাকাবাসী বলেন, সূর্য খুব ভালো ছেলে ছিল। তার মা রাজিয়া সুলতানা অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি শহিদ হন। ছেলের শোকে তার মা আজ পাগলপ্রায়। সারাদিন ছেলের ছবি-কাপড় বুকে নিয়ে কাঁদেন।

হাকিমপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে সূর্য শহিদ হয়েছেন। আমরা শহিদ সূর্যের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।’’

হাকিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুজন মিয়া বলেন, ‘‘গত ৫ আগস্ট হাকিমপুরে সূর্য ও নাঈম শহিদ হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়