ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘সুপার হিরো’ প্রতিবন্ধী সোহেল

হৃদয় এস সরকার, নরসিংদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ২৪ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৮:২৫, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
‘সুপার হিরো’ প্রতিবন্ধী সোহেল

উচ্চতা মাত্র তিন ফুট। হাত-পা এতটাই ছোট যে, সহজে কোনোকিছুর নাগাল পাওয়াটা তার জন্য খুবই মুশকিল। বলছিলাম নরসিংদী শহরের রিকশাচালক শারীরিক প্রতিবন্ধী সোহেল মিয়ার কথা।

শারীরিকভাবে আট-দশটা মানুষের থেকে দুর্বল ও খর্বাকৃতির হলেও সোহেল মিয়ার রয়েছে অদম্য শক্তি। ভোর সকাল হলেই রিকশার চালকের আসনের নিচে একটি ছোট্ট টুলে নিজের ছোট-ছোট দুটি পা রাখেন। এরপর হাতল ধরে বেরিয়ে পড়েন জীবিকার সন্ধানে।

নরসিংদী শহরের, পাড়া, মহল্লা, অলিগলি সড়ক সর্বত্রই রিকশা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। এ রিকশা চালানোর টাকা দিয়েই চলছে তার সংসার। পাশাপাশি দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাছেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন, তার দুই ছেলে একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে।

ফজলে রাব্বি ও মেহেদী হাসান নামে দুজন স্থানীয় বলেন, “সমাজের অধিকাংশ মানুষই সুঠাম ও সুন্দর শরীরের অধিকারী। তাদের সবকিছু থাকার পরেও কর্ম করতে চান না। আর সেই দিক থেকে মাত্র তিন ফুট উচ্চতার এ মানুষটি পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করছেন।”

তারা বলেন, “এ প্রতিবন্ধকতার কারণে চাইলেই তিনি ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে সমাজের মানুষের চোখে দেখিয়ে দিয়েছেন, মনোবল থাকলে প্রতিবন্ধীতা জীবনে কোনো বাঁধা নয়। আমরা জানতে পেরেছি, সোহেল ইতোমধ্যে সবার কাছে ‘সুপার হিরো’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।”

“নিজের কর্মে সংসার নির্বাহের পাশাপাশি তার দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। আমাদের চোখে এটা সমাজের সবচেয়ে উত্তমতম কাজ। সুন্দর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রিকশাচালক সোহেল মিয়া,” যুক্ত করেন রাব্বি ও মেহেদী।

শারীরিক প্রতিবন্ধী রিকশাচালক সোহেল মিয়া বলেন, “চলার পথে অনেকের অনেক রকম কটু কথা শুনেছি। মানুষ কখনোই আমাকে ভালো চোখে দেখেনি। লাঞ্ছনা, বঞ্ছনা, অপমান সহ্য করার পরও জীবনে ভালো কিছু করতে চেয়েছি সবসময়। কিন্তু কখনও ভিক্ষা করে খাওয়ার কথা কল্পনাও করিনি।”

তিনি বলেন, “আমি যতটুকু পারি, সে অনুযায়ি এখন কর্ম করে খাচ্ছি। এখনো রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হলে দেখি, আমি প্রতিবন্ধী হওয়াই অনেকে আমার রিকশায় উঠতে চান না। বলেন, ‘আমার রিকশা উঠলে নাকি তাদের ক্ষতি হবে।’ এরপরও অনেক মানুষ আছেন, যারা আমার রিকশায় উঠেন এবং আমাকে মনোবল বাড়ার জন্য শক্তি যোগান।”

“এ কর্মের টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে। দুই ছেলে সিফাত ও সাফাত। সিফাত পড়াশোনা করছেন অষ্টম শ্রেণিতেও সাফাত তৃতীয় শ্রেণীতে। শিবপুর উপজেলার ভাতেরকান্দি এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নিয়ে আমরা থাকছি। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ চাইলে সবকিছুই পারে,” যুক্ত করেন সোহেল মিয়া।

ঢাকা/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়