ঢাকা     সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১০ ১৪৩১

স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২৪ নভেম্বর ২০২৪  
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ আলম সিদ্দিকীর (সম্প্রতি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় বদলি হয়েছেন) বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। 

চলতি বছরে ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান নেন। পরে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। 

সিভিল সার্জনের দাবি, দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ না করায় ডা. শাহ আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, পুরো বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে। সেই সাথে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। 

সেই অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী ইউএইচএফপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তারপর থেকেই প্রভাব বিস্তার করে দৌলতপুর উপজেলায় অফিস না করেও অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। হাসপাতালের খাবার সরবরাহ টেন্ডারে পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ, ওষুধ কেনাকাটায় লুটপাট, হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খাত থেকে বিগত অর্থ বছরগুলোতে কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলেও ঊর্ধ্বতন কোনো কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ৫ আগস্টের পর অভিযোগগুলোর মাত্রা বেড়ে গেলে স্থানীয়দের তোপের মুখে ছুটি নেন ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী। পরে কৌশলে সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই কর্মকর্তাকে বদলি করেন। প্রশাসনের দাবি, স্বাভাবিক বদলি প্রক্রিয়ায় তার বদলি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, “দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ সেবা গ্রহীতারা তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তবে প্রশাসনের আশকারায় ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী দায়মুক্তি পেয়ে বদলি হয়ে গেলেন। ওনার দুর্নীতির বিচার না হওয়ায় অনেকেই দুর্নীতির সুযোগ পাবেন।”

আন্দোলনকারী মো. শান্ত মিয়া বলেন, “দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রান্তিক মানুষের নূন্যতম সেবার ব্যবস্থা ছিল না। ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী অফিস করতেন না। ফলে তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও অফিস ফাঁকি দিতেন। হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় হাসপাতাল পরিচালিত হতো। প্রতি বছর অফিস পরিচালন খাত থেকে ওই কর্মকর্তা অর্থ লুটপাট করেছেন। এমন অভিযোগ সিভিল সার্জন মহোদয়কে জানানো হয়েছে। ডা. শাহ আলম সিদ্দিকীর দুর্নীতিগুলো তদন্ত করে তাকে আইনানুগভাগে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।”

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মো. সালমান খান বলেন, “ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী ঠিকমতো কখনই অফিস করেননি। তার সময়ে চরাঞ্চলবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সরকারি দরপত্রগুলোতে অনিয়মের মাধ্যমে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।” 

এসব অনিয়মের বিষয়ে ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী বলেন, “দরপত্রের নিয়ম কানুন অনুসরণ করে ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে থাকে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। সেই সাথে হাসপাতাল অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকার অভিযোগ সত্য নয়। আমিই সবচেয়ে বেশি দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অফিস করেছি, তাদের সেবা দিয়েছি।” 

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মকছেদুল মোমিন বলেন, “ডা. শাহ আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। স্বাভাবিক নিয়মে তার বদলি হয়েছে।”

ঢাকা/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়