পিলখানা হত্যাকাণ্ড: চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল দাবিতে মানববন্ধন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও অভিযুক্ত হয়ে কারাবন্দিদের মুক্তিসহ ৯ দফা দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের গানাসার্স মার্কেটের সামনে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ গাইবান্ধা জেলা শাখা মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ও জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সংগঠনের জেলা সমন্বয়ক আব্দুর রাজ্জাক, আসাদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মাহফুজ আলম, ইলিয়াস হোসেন, ফিরোজা বেগম প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো, ২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (এখন বিজিবি) হেড কোয়ার্টার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ‘তথাকথিত বিদ্রোহ’ সংজ্ঞায়িত না করে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অ্যাখায়িত করা; ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে পিলখানাসহ সারা দেশে বিডিআর ব্যাটালিয়ন ও সেক্টরে গঠিত সকল ‘প্রহসনের’ বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল; এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যকে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধাসহ পুর্নবহাল; হত্যাকাণ্ডের মামলায় হাইকোর্টের বিচারকদের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ঘটনার মোটিভ উদ্ধার ও কুশীলবদের শনাক্ত করতে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন; হত্যাকাণ্ডে নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া; ২৫ ফেব্রুয়ারিকে পিলখানা ট্র্যাজিডি দিবস হিসেবে ঘোষণা; হত্যাকাণ্ডের ঘটনা-পরবর্তী তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা হেফাজতে যে সকল বিডিআর সদস্যদের ‘হত্যা’ করা হয়েছে, তাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা; তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিযুক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, যারা বিডিআর সদস্যদের নির্যাতন করে ‘হত্যা’ করেছেন, তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা এবং বিশেষ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষকরা বিডিআর সদস্য, যারা বিস্ফোরক মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর কারা অন্তরীণ আছেন, তাদের অনতিবিলম্বে জামিন ও মামলা থেকে মুক্ত করা।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটে।
সেদিন বিডিআরের কয়েকশত সদস্য পিলখানায় হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা হত্যাকাণ্ডে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও নৃশংসতার শিকার হন।
এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনও সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।
হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন।
ঢাকা/মাসুম/বকুল