বিদ্যালয় মাঠে হাট, পাঠদান ও খেলাধূলা ব্যাহত
রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম
আবদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাট বসানো হয়
বিদ্যালয়ের বয়স প্রায় ৫২ বছর। পুরনো এই বিদ্যালয়ের নাম আবদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামে অবস্থতি। এই বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে বসছে গ্রামীণ হাট। ফলে হাটের দিনে পাঠদান যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি খেলাধুলা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, জরুরিভাবে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও হাট-বাজার কমিটির কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও সুরাহা মেলেনি। যে কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিকারের পথ পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বিভিন্ন জন এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার শত বছরের প্রাচীন লোহাই হাট প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার বসে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সমস্যা না হলেও সোমবার ঘিরে তৈরি হয় জটিলতা। হাটের দিন হাজারও মানুষের কোলাহলে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। আশপাশের শত শত দোকানি পণ্যের পসরা নিয়ে বসে। এ সব দোকানের লম্বা লাইন বাজারের স্থান ছাড়িয়ে বিদ্যালয় মাঠে চলে আসে। দুপুর থেকে হাট বসায় বিদ্যালয়ে পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও অ্যাসেম্বলির প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চললেও প্রশাসনের কার্যত ভূমিকা রাখছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
উপজেলা ভূমি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোহাই হাট শত বছরের পুরনো হলেও এটি সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়। স্থানীয়দের জমিতে হাটটি পরিচালিত হচ্ছে। ভাসমান দোকানিদের কাছ থেকে খাজনা উঠিয়ে হাট-বাজার কমিটি ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। এই হাট থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, ‘‘শিক্ষার পরিবেশের প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদ্যালয় আঙিনা থেকে হাট সরিয়েছিলাম। ফের বসে যায়।’’ স্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল জান্নাত বলেন, সপ্তাহে দুই দিন বিদ্যালয়ের আঙিনায় হাট বসে। তবে শুক্রবার পাঠদান বন্ধ থাকায় সমস্যা না হলেও সোমবারে মূল সমস্যা তৈরি হয়। সেদিন শিক্ষার্থীদের অ্যাসেম্বলি করানো যায় না। কোলাহলে পাঠদান ব্যাহত হয়। বহিরাগতদের আনাগোনা থাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশের জন্য বিদ্যালয় মাঠ থেকে হাটটি সরানো খুব প্রয়োজন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন।
হাট পরিচালনাকারী মোসলেহ উদ্দিন মাস্টার বলেন, বিদ্যালয় মাঠে হাট চলে যায় এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। এ বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, ‘‘আমি বিদ্যালয় মাঠে হাটের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমাকে মৌখিক বা লিখিতভাবে কেউই জানাননি। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে শিক্ষার মান অক্ষুন্ন রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
/ঢাকা/বকুল