ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: শফিকুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
খুলনার ইস্টার্ণ জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে রবিবার শ্রমিক সমাবেশে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “সব জাতীয় ইস্যুতে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রয়োজন। এ দেশ কারো একার নয়, দেশ সবার। দেশ ১৫ বছরেও জঞ্জালমুক্ত হয়নি। তাই সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় ইস্টার্ণ জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “মর্যাদাশীল দেশ গড়ার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরনির্ভরশীল নয়, কৃষি ও শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ গড়া প্রয়োজন। প্রভূ নয়, বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র চাই। কোনো আগ্রাসীর হাত আমরা দেখতে চাই না।”
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশের দুটি দেশ প্রেমিক সংস্থাকে ধংস করেছে। প্রথমেই তারা বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করে। তাদের সেই অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব এ দেশের শান্তিকামী ছাত্র-জনতা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দিয়েছে।”
জামায়াতের আমির বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেও আমরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করি। আমাদের মধ্যে রয়েছে অভূতপূর্ব সম্পর্ক এবং সম্প্রীতি। এটিই আমাদের সৌন্দর্য। এটি এদেশের মানুষের গর্ব।”
তিনি আরো বলেন, “এমন সুন্দর বাংলাদেশকে এলোমেলো করে দিয়েছিল একটা পরিবার, একটা গোষ্ঠী, একটা দল। এরা পরিবারকে দেখেছে আগে, এরপর দেখেছে গুষ্টিকে, এরপর দেখেছে দলকে। তারপর জুলুম চালিয়ে দিয়েছে জনগণের ঘাড়ে। যারা ছিল হিংসুক, সংকীর্ণমনা। এরা না আল্লাহকে ভয় করেছে, না মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেছে। এরা মানুষকে মানুষ গণ্য করেনি। জেল-জুলুম খুন এবং গুমের শিকার সারা বাংলাদেশের মানুষ।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উস্কানি দিচ্ছে। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র হোক তা ব্যর্থ করতে হবে।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “এ অঞ্চলের প্রধান দু’টি সমস্যা হলো মিল ও বিল। আওয়ামী লীগের আমলে ওই দু’টিই ধংস হয়েছে। একদিকে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে অপরদিকে বিল ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন জলাশয় দখল ও সুইচগেট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতির কারনে মিলগুলো লোকসান হলেও তার দায়ভার চাপানো হয়েছে শ্রমিকদের ওপর।”
খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুনের পরিচালনায় এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
এর আগে, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শামসুন নাহারের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সমাবেশে স্বাগত বক্তৃতা করেন মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল। এসময় উপস্থিত ছিলেন, খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ