আমার অভিজ্ঞতা বলে, আগামী নির্বাচন এত সহজ নয়: তারেক রহমান
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হলে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন আমরা এখনই ক্ষমতায় চলে গেছি, কিন্তু তা নয়। ক্ষমতায় যেতে হলে জনসমর্থন প্রয়োজন। জনগণের সমর্থন আমাদের আদায় করতে হবে। জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে। তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নেতাদের চালচলনে মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে যে নির্বাচন আসছে, সেটি এত সহজ নয়। আমার ৩০-৩৫ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায়, সে নির্বাচন অনেক কঠিন হবে। মানুষের চিন্তা ধারার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যদি কোনো ভুল করেও থাকি, তাহলে নিজেদের সংশোধন করতে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।’’
সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক ময়মনসিংহ বিএনপির বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বলেই ৩১ দফা দিয়েছে। আমরা আমাদের সাথের সমমনা দলগুলোর সাথে আলোচনা করেই ৩১ দফা দিয়েছি। তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আপনারা নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে হবে।’’
নেতাকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘‘একটি দেশকে শক্তিশালী করতে হলে প্রাইমারি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিশুদের আদব-কায়দা শেখাতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রের বরাদ্দে দালাল কোঠা নির্মাণ কমিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সমাজে যাদের গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে, তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হবে।
‘‘দুর্নীতি সামাজিক ভাবে কমিয়ে আনতে হলে প্রাইমারি লেভেল থেকে তা কমিয়ে আনতে হবে। তারা যদি বাচ্চাদের শেখায় দুর্নীতি খারাপ ভালো নয়, তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর তাহলে তা কমিয়ে আনতে অন্তত ৫ থেকে ১০ বছর লাগবে।’’
আগামীতে কৃষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমাদের দেশে চাঁদা বাজি আছে। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
মধ্যসত্ত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে কৃষকদের ৫ হাজার টাকা লোন মওকুফ ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘‘প্রত্যেক কৃষককে একটি করে কার্ড দেয়া হবে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার বীজ যেন তাদের কাছে পৌঁছায়। এক বিঘা জমি চাষ করতে যদি একজন কৃষককে ২০ হাজার টাকা সাপোর্ট দেওয়া যায়, তাহলে তারা ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবে। এটা তাদের জন্য বড় পাওয়া হবে। প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হবে ফ্যামিলি কার্ডও, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের সার্পোট করার জন্য।’’
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘‘আমরা মনে করি একটি দেশকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী করণ করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করব।’’
এর আগে, সোমবার সকাল ৯টায় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার শুভ উদ্বোধন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ঈসমাইল জবি উল্লাহ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা: মাহাদী আমিন, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবীবা।
কর্মশালাটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী।
এ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে এই কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি, মাহমুদুল হাসান রুবেল, ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, লাইলী বেগম, ড. শামছুজ্জামান মেহেদী, আরিফা জেসমিন প্রমুখ।
মিলন/এনএইচ