ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

ছেলে হারানোর বেদনায় পাগলপ্রায় মা

হৃদয় এস সরকার, নরসিংদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১১:৫০, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ছেলে হারানোর বেদনায় পাগলপ্রায় মা

আরিফুল ইসলাম রাব্বি

নরসিংদী মাধবদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হয়েছেন আরিফুল ইসলাম রাব্বি (২০)। তার পরিবারে এখন শোকের ছায়া। অসহায় অবস্থায় কাটছে তাদের দিন। ছেলে হারানোর বেদনায় পাগল প্রায় নিহত রাব্বির মা শামসুন্নাহার।

৪ আগস্ট মাধবদীর ভগিরথপুর বাসস্ট্যান্ডে গুলিতে নিহত হন আরিফুল ইসলাম রাব্বি। রাব্বি ভগিরথপুর এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে। রাব্বি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার খরচ যোগাতেন।

মা শামসুন্নাহার বলেন, “আমরা তো বড়লোক নই, দরিদ্র পরিবার। এখন দেখার জন্য কেউ আসে না বাসায়। ছেলে ছাড়া আজ ৪ মাস হতে চলল। খাওয়া দাওয়া কিছুই ঠিক নাই। একটি মাত্র ছেলে ছিল ও দুইটি মেয়ে। এই ছেলেটাকে নিয়ে যত স্বপ্ন দেখা। পরিবারের ভরণপোষণ খরচ সবকিছু ছেলে রাব্বি দিতো। বড় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি সেও চার মাস হলো। কিন্তু ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি বাসায় একা থাকতে পারি না, তাই বড় মেয়েটাকে ধরে এনে বাসায় চার মাস রেখেছি।” 

আরো পড়ুন:

মা বলেন, “আমার ছেলে রাব্বির বুকের মধ্যে একটা গুলি করেছিল। গুলিটার কারণে বুকটাতে বড় ছিদ্র হয়ে যায়। ছেলেটা আর বাঁচলো না। আমাগো সংসারে আর কোনো কিছুই নাই। এককথায় ইনকাম তো নাই। ওর আব্বা তো আরো অসুস্থ। পায়ের ব্যথায় কাজ করতে পারে না। আগে যা-ও মানুষ টুকটাক দিয়েছিল। এইগুলি ভেঙে ভেঙে খেয়েছি এখন খাওয়ার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। সংসার বলতে সংসার নাই, সংসার যে কি জিনিস একদম সেটা শেষ। যদি কেউ আইতো, তাহলে বুঝতো পরিবারের হাল কি চলছে। আমি তো মা অভাগিনী, এটাতো বলার মতো না।” 

তিনি আরও বলেন, “আজ চার মাসের মধ্যে এক সেকেন্ডের জন্য নিজের ছেলেকে ভুলতে পারছিনা। ২৪ ঘণ্টাই চোখের পানি টলমল করে। খামু, ঘুমামু, গোসল করমু, রাস্তায় যামু, বাইরে যামু- সব জায়গার মধ্যে নিজের ছেলেকে খুঁজি। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার কাছে আমার সন্তান কি ছিল। বাড়ির পাশে উঠানে এই ছেলেকে কবর দিয়েছি। যদি পারতাম যদি কোন গুনাহ না হইতো আল্লাহর সাথে কথা বলে নিজের জান দিয়ে ছেলের পাশে কবরে শুয়ে থাকতাম। যে ছেলেকে এক নজর না দেখলে জীবনে চোখে ঘুম আসে নাই। কলিজা ঠাণ্ডা হয় নাই। সে ছেলে ছাড়া একটা মা’র কি অবস্থা সেটা একমাত্র মা’ই বুঝছে। সারাদিন ছেলের কথা বললেই ভালো লাগে আমার। আর কিচ্ছু দুনিয়াতে মজা লাগে না। কারো সাথে কথাবার্তি বলতে ভালো লাগে না। শুধু নামাজ রোজা পড়ে ছেলের জন্য একটু দোয়া করি।” 

তার প্রশ্ন, “আমার ছেলেটাকি খুব বেশি অপরাধ করেছিলো, আমার ছেলেটাকে কেন মারলো এইভাবে তারা?” 

নরসিংদী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আব্দুল মমিন মোল্লা বলেন, “গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আরিফুল ইসলাম রাব্বির পরিবারকে সহায়তা করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আমরা দেখব কি করা যায়।” 

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়