ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

‘মুখ দেখে আমি আমার নিজের পুলারে চিনতে পারি না’

তারিকুল ইসলাম, শেরপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১২:৫১, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
‘মুখ দেখে আমি আমার নিজের পুলারে চিনতে পারি না’

খোকন চন্দ্র বর্মনের আগের ছবি, বর্তমান ছবিটি প্রকাশের অযোগ্য

“নিজের শরীরের অনেক যত্ন নিতো পুলাডা। এখন আমি মুখ দেখে আমার নিজের পুলারে চিনতে পারি না। আমার ছেলের মুখের কিছুই আর নেই। ছেলে আমার প্রতিদিন কান্না করে, আর বলে- ‘তোমরা সরকারকে বলো তাড়াতাড়ি আমাকে ভালো করে দেক।’ আন্দোলনের পর সরকার বলেছিলো যাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমরা এখন কী করব বুঝতে পারছি না।”

আক্ষেপ করে বলছিলেন, খোকন চন্দ্র বর্মনের মা রিনা রানী দাস। 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কিনা চন্দ্র বর্মনের ছেলে খোকন চন্দ্র বর্মন (২৩) ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিতে আহত হন। 

আরো পড়ুন:

খোকনের পরিবার জানায়, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে এদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এসময় ছররা গুলি এসে খোকনের মুখে ও চোখের নিচের অংশে লাগে। এতে তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। আর মুখের এমন অবস্থা হয়েছে যে কেউ চিনতেই পারেনা, এটা খোকন। এছাড়াও চোখের নিচের হার ভেঙে যায়। আর যে চোখটা ভালো আছে সেটাও এখন উন্নত চিকিৎসার অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে। ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালের বিছানা তার একমাত্র ঠিকানা। 

পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা দুই ভাই পরিবারের আয়ের উৎস ছিলেন। খোকন আহত হওয়ার পর থেকে তার বড় ভাই খোকা ছোট ভাইয়ের দেখাশোনা করার জন্য চাকরিটা ছেড়ে দেন। দুই ভাই এক কোম্পানিতে প্রাইভেটকারের চালক ছিলেন। ছাত্র আন্দোলন জোরদার হলে বন্ধ হয়ে যায় তার অফিস। ফলে বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে খোকন আন্দোলনে অংশ নেন। বর্তমানে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে (শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) চিকিৎসা নিচ্ছেন খোকন।

মুঠোফোনে খোকন চন্দ্র বর্মন রাইজিংবিডিকে বলেন, “পুলিশ আমাকে খুব কাছ থেকে গুলি করেছে। গুলিতে আমি মাটিতে পড়ে যাই, তবে জ্ঞান হারাইনি। গুলি লাগার পর ছাত্ররা আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফোনে আমার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। আমি জানতাম আন্দোলনে গেলে মরতেও হতে পারে। তবুও ভয় পাইনি। কপাল খারাপ গুলি খেয়ে গেলাম। আমার মুখের অবস্থা একদম ভালো না। অনেক যন্ত্রণা হয়। শুনতেছি উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে বিদেশ পাঠাবে‌। কিন্তু তিন মাস হয়ে গেলো কিছুতো হচ্ছে না। শুধু সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাটা যেন করে দেয়।”

খোকনের বড় ভাই খোকা চন্দ্র বর্মন রাইজিংবিডিকে বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস ভাই (সারজিস আলম) এসেছিলেন। তিনি কিছু সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। আর কিছু ধারদেনা করে সংসার চলছে। আমার চাকরি ছিলো সেটাও চলে গেছে। আমার ভাই এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে। খোকনের একটি চোখ পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে, অলরেডি আরেকটি চোখ ফুলে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা না করা হলে ওইটার অবস্থাও খারাপ হয়ে যাবে। গুলি চোখ-মুখ-নাক সব জায়গায় লেগেছে। খোকনকে এখন সহজে চেনাই যায় না।”

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়