শেরপুরের ছানার পায়েস: স্বাদ ভিন্ন, চাহিদাও ব্যাপক
তারিকুল ইসলাম, শেরপুর || রাইজিংবিডি.কম
মিষ্টি দেখলে কার না খেতে ইচ্ছা করে! আর যদি তা হয় শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘ছানার পায়েস’, তাহলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রসিদ্ধ মিষ্টির মধ্যে শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’ অন্যতম।
শত বছরের ঐতিহ্য এখন জিআই পণ্য
শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত জিআই নিবন্ধন সনদ শেরপুর জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে।
৫০টি দোকানে তৈরি হচ্ছে ‘ছানার পায়েস’
শেরপুরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ছানার পায়েসের এতই সুখ্যাতি যেকোনো বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, অতিথি আপ্যায়নে ‘ছানা পায়েস’ ছাড়া চলেই না। এক সময় হাতে গোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হলেও বর্তমানে জেলার অন্তত ৫০টি দোকানে ছানার পায়েস তৈরি হচ্ছে।
এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয় প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ কেজি ছানার পায়েস। বর্তমানে প্রতি কেজি ছানার পায়েস ৩৮০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জন্মদিন, ঈদ, বিয়েসহ বিভিন্ন পার্টিতে ছানার পায়েসের প্রচুর অর্ডার আসে জেলার বাইরে থেকে।
জেলার বাইরে যাচ্ছে ‘ছানার পায়েস’
জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানার পায়েস বিক্রি হলেও মূলত শেরপুর জেলা শহরের চারু সুইটস, অনুরাধা, নিউ প্রেমানন্দ, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয়, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নন্দ গোপাল, মা ভবতারা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হোটেল নূর রহমান ও বল্লব মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে ছানার পায়েস বেশি পাওয়া যায়।
যেভাবে তৈরি হয়
গরুর খাঁটি দুধ প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি বানানো হয়। গুটিগুলো চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে দেওয়া হয়। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু ছানার পায়েস
‘ছানার পায়েস’ তৈরির প্রধান উপকরণ হলো-দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ। প্রথমে উচ্চমাত্রার তাপে দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটি চিনিমিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে হাল্কা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু ছানার পায়েস। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরির জন্য দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০-১৫ গ্রাম এলাচের প্রয়োজন হয় বলে জানান কারিগররা।
কারিগররা যা বললেন
শেরপুরের অনুরাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে কর্মরত কালিপদ ঘোষ নামের একজন কারিগর বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মিষ্টি তৈরির কাজ করছি। আমাদের এখানে খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় ছানার পায়েস। তাই স্বাদটা একটু ভিন্ন, চাহিদাও ব্যাপক।’’
অনুরাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক বাপ্পি দে বলেন, ‘‘শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েসের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। জেলার বাইরে থেকে কোনো ভ্রমণপিপাসু শেরপুরে এলে, ফেরার সময় ছানার পায়েস সঙ্গে করে নিয়ে যান। ছানার পায়েস জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায়, এর কদর আরও বাড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস। এটি আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক। আমরাও আমাদের ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষার্থে তৈরিতে কোনো অলসতা করি না।’’
জেলা প্রশাসক যা বললেন
এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘শেরপুরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে ছানার পায়েসের বেশ সুনাম রয়েছে। দেশে-বিদেশে এ মিষ্টির বেশ কদর রয়েছে। ছানার পায়েস তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে অনেকেই জড়িত। এটিকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের ফলে এর কদর আরও বাড়বে। এছাড়াও দেশের বাইরেও রপ্তানি করাও এখন সহজ হবে।’’
ঢাকা/এসবি