কোমর ভাঙলেও ছেলে বেঁচে আছে, এটাই সান্ত্বনা মায়ের
তারিকুল ইসলাম, শেরপুর || রাইজিংবিডি.কম
মো. সোলাইমান কবির
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গিয়ে প্রশাসনের সরকারি গাড়ির ধাক্কায় কোমর ভেঙে আহত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী কলেজ শিক্ষার্থী মো. সোলাইমান কবির (১৯) এখনো ভালো করে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। প্রায় চার মাস ধরে উন্নত চিকিৎসা শেষে স্ট্রেচারে ভর করে একটু সোজা হতে পারছেন তিনি।
কোমর ভেঙে বিছানায় পড়ে থাকা ছেলেকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন মা ময়না বেগম। এ অবস্থায় দিশেহারা মায়ের কাছে এটাই সান্ত্বনা যে, তার ছেলেটি বেঁচে আছে। ময়না বেগমের মুখে সেটাই পরম প্রশান্তি। কারণ, সেই দিন একই ঘটনায় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আহতসহ দুইজনের মৃত্যু হয়। ময়না বেগমের দাবি, ‘কোমর ভাঙলেও ছেলেতো বেঁচে আছে।’
গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা দাবির আন্দোলনে শেরপুর সরকারি কলেজ মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হয়। সোলাইমান সেই গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়েন রাস্তার পাশে। এসময় তার কোমর ভেঙে যায়।
সোলাইমান শেরপুরের সদর উপজেলার কামারেরচর গ্রামের প্রবাসী সেলিম মিয়ার ছেলে।
বিছানায় পড়ে থাকা ছেলের পাশে মা ময়না বেগম
ময়না বেগম বলেন, “আমার ছেলে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেতো আর ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতো। ৪ আগস্ট সে ছাত্র আন্দোলন অংশ নেয়। সরকারি গাড়ির ধাক্কায় আমার ছেলে এভাবে আহত হবে তা আমি কখনও ভাবিনি। আমরা আট বছর হলো গ্রাম থেকে এসে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। ওর বাবা ১০ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে আছেন। তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন একটা বিপদ এসেছে যে আমার ছেলে বিছানায় শয্যাশায়ী। ডাক্তাররা তার পা টানা দিয়ে রাখতে বলেছেন। কয়েকদিন যাবত টানা খোলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমার ছেলে ২০২৩ সালে শেরপুর আইডিয়াল প্রিপারেটরি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে এখন সরকারি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ওর বাবা দেশে নেই। সংসার চালানো থেকে শুরু করে সবই আমার করতে হয়। এখন ছেলে অসুস্থ কেমনে চলবে সব কিছু, চিন্তা হয়। এখন পর্যন্ত চিকিৎসার কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমার ছেলেকে যারা আহত করেছে তাদের সঠিক বিচার চাই।”
আহত সোলায়মান বলেন, “আমরা রাস্তায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রটোকলে এসিল্যান্ডের গাড়ি আসে। আমরা ভেবেছিলাম গাড়িগুলো এসে আমাদের সাইট চাইবে। আমরাও আস্তে আস্তে রাস্তা ফাঁকা করে দিচ্ছিলাম। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ চাইলেই হুট করে সরে যাওয়া যায়না। সরকারি গাড়িটি কোনো হর্ন ছাড়াই আমাদের উপরে উঠায়ে দেয়। আমি সামনে ছিলাম মাহবুব ভাই ও সৌরভ ভাই আমার পিছনে ছিলেন। তারা ওইখানেই মারা গেছেন। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। তবে আমার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না। আমার পা-কোমর ভেঙে গেছে। এখন বারান্দায় শুয়ে দিন কাটছে। আমি চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
সোলায়মানের বন্ধু ফাহিম বলেন, “আমার বন্ধুর ওপর দিয়ে সরকারি গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে তার কোনো বিচার হয়নি। চারমাস হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন কোনো কিছু করছে না।”
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তবে পরে ঘটনার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আহতদের তালিকাও করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/টিপু