ছেলে থাকে দুবাইয়ে, বাবা থাকেন ঝুপড়ি ঘরে
শাহরিয়ার আলম সোহাগ, ঝিনাইদহ || রাইজিংবিডি.কম
ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে তালের পাতা দিয়ে হাত পাখা বিক্রি করছেন পাঁচু মিয়া
নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসে। আশা ছিল বৃদ্ধ বয়সে শান্তিতে দিন কাটাবেন। তবে সেই কপাল হয়নি পাচু মিয়ার। এখন নিজের কাজ নিজেরই করে দিন চালাতে হচ্ছে তাকে। ছেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে থাকলেও বাবার ঠিকানা এখন রাস্তার পাশের ঝুপড়ি ঘর।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই-গান্না সড়কের বালিয়াখাল এলাকায় পলিথিন ও ভাঙা টিন দিয়ে তৈরি করা ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন ৬৫ বছর বয়সী পাঁচু মিয়া। সেখানে তালের পাতা দিয়ে তৈরি করা হাত পাখা বিক্রি করে এবং নরসুন্দরের কাজ করে নিজের ভরণপোষণ চালান পাঁচু মিয়া। তার ঘরে রয়েছে চুলাসহ খাবার রান্না করার বিভিন্ন সামগ্রী। বাজারের টিউবওয়েল থেকে পানি এনে নিজের প্রয়োজন মেটান তিনি।
ভাঙা টিন দিয়ে তৈরি করা ঘরে একাই থাকেন পাঁচু মিয়া
জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে বাড়ি পাঁচু মিয়ার। নব্বইয়ের দশকে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বালিয়াখাল বাজারে সেলুনের দোকান দিয়েছিলেন তিনি। এই দোকান থেকে যা আয় হতো সেটা দিয়েই চলাতেন সংসার।
গত ১০ বছর আগে পাঁচু মিয়ার মেয়ে নিমবিয়া মারা যান। পাঁচ বছর আগে মারা যান স্ত্রী সরভানু বেগম। এরই মধ্যে কষ্টের টাকায় ছেলে মিন্টু মিয়াকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন পাঁচু মিয়া। সেখানে ৭-৮ বছর থাকার পর দেশে আসেন মিন্টু মিয়া। পরে মিন্টু মিয়া দুবাই চলে যান। এরপর থেকে মিন্টু মিয়ার সঙ্গে তার বাবা পাঁচু মিয়ার কোনো যোগাযোগ নেই।
পাঁচু মিয়ার প্রতিবেশী দুর্গাপুর গ্রামের বাবলু রহমান বলেন, “শারীরিকভাবে অসুস্থ পাঁচু মিয়া। তবুও কারো কাছে হাত পাতেন না তিনি। এই বয়সেও দিব্যি হাত পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিজেই রান্না করে খাবার খান। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর এই ঝুপড়ি ঘরেই রাত কাটে তার। গ্রামের বাড়িতে তেমন একটা যান না তিনি।”
গোলাম সরোয়ার মল্লিক নামে অপর প্রতিবেশী বলেন, “পাঁচু মিয়ার এক ছেলে দুবাই থাকে। তার মেয়েটা মারা গেছে। মাঝে মধ্যে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে আসলে আমার সঙ্গে তার কথা হয় তার। পাঁচু মিয়া বলে, তার কোনো সুখ-শান্তি নেই। ছেলে ও বৌমা তার খোঁজ খবর নেয় না।”
পাঁচু মিয়ার ঘর
পাঁচু মিয়া বলেন, “আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটা বছর দশেক আগে মারা গেছে। ছেলে দুবাই থাকে। আমার স্ত্রী পাঁচ বছর আগে মারা গেছে। এরপর থেকেই এই ঝুপড়ি ঘরে থাকি। ৩০ বছর আগে থেকে বালিয়াখাল বাজারে হাত পাখা বিক্রি করি ও নরসুন্দরের কাজ করি। এই কাজ করে যা আয় করেছিলাম সেই টাকা থেকে গুছিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠাই। নিজের কাজ এখনো নিজেই করি।”
তিনি আরো বলেন, “ছেলে ও ছেলের বৌ খোঁজ খবর নেয় না। মনের কষ্টে তাই বাড়িতে যাই না। নিজে যা আয় করি তা দিয়েই চলি। বর্তমানে হাত পাখা তৈরি ও নরসুন্দরের কাজ আমার ঘর চলে।”
এ বিষয়ে জানতে পাঁচু মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়ার স্ত্রী মোছা. চম্পা খাতুনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে তাকে পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোহাগ রানা বলেন, “পাঁচু মিয়া ভালো মানুষ। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর লোকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। ছেলে দুবাই থাকে। ছেলে ও বৌমা খোঁজ নেয় না পাঁচু মিয়ার। বালিয়াখাল বাজারের একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকেন তিনি। এই বয়সে লোকটার কষ্ট দেখে খুবই খারাপ লাগে। বাজারে যে যা পারে তাই দিয়ে পাঁচু মিয়াকে সহযোগিতা করেন।”
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। খোঁজ খবর নিয়ে ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়াবেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মাসুদ