ঢাকা     সোমবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৬ ১৪৩১

মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ গাংনীবাসী

মেহেরপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১২:১৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ গাংনীবাসী

ফাইল ফটো

মেহেরপুরের গাংনীতে মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে বেপরোয়াভাবে যত্রতত্র মাইক বাজানো হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচি, ডাক্তারের সন্ধান, গরু-ছাগল হারানোসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রচারণা চালানো হয়। এতে সড়কের পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমার দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শব্দদূষণে শরীরের প্রথম আক্রান্ত হয় কান এবং শ্রবণশক্তি। যারা সব সময় শব্দের মধ্যে থাকেন, তারা ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন। শব্দদূষণের কারণে শিশু মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী পর্যন্ত হতে পারে। অতিরিক্ত শব্দে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মানসিক অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া মানসিক ক্লান্তি, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুবিক সমস্যা, অমনোযোগিতা সৃষ্টি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে।

গাংনী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকেই মাইকে নানা প্রচারণা চালানো হয়। উচ্চ শব্দে কান ঝালাপালা। সেই সঙ্গে গাড়ির হর্নের শব্দ তো আছেই। আমরা শব্দদূষণের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।

গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আমাদের পরীক্ষা চলছে। কিন্তু, দিন-রাত সমানতালে মাইক বাজানো হচ্ছে। উচ্চ শব্দে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া যায় না।

গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রাজা বলেন, ‘‘উচ্চ শব্দে মাইক বাজানোর ফলে ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে পাঠদান ব্যাহত হয়।’’

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ এবং বিধিমালায় ‘নীরব’ ‘আবাসিক’, ‘মিশ্র’, ‘বাণিজ্যিক’ ও ‘শিল্প’ পাঁচটি এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

বিধিমালার আওতায় নীরব এলাকায় দিনে (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫০ ডেসিবল ও রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪০ ডেসিবলের বেশি আওয়াজ করা যাবে না। একইভাবে আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবল শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ দেখভাল না করার কারণে যত্রতত্র মাইক বাজানো হচ্ছে। 

মাইক ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতা ও শ্রতাদেরকে আকৃষ্ট করতেই উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হয়। মাইক বাজাতে প্রশাসনের অনুমতি নেন কি না এমন প্রশ্নে তারা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েন, মাইক বাজাতে অনুমতি নেওয়া লাগে?

এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর মেহেরপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোজাফফর হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, ‘‘গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। তাকে আবারো বলব।’’

উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহার বন্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখছি।’’

ঢাকা/ফারুক/রাজীব


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়