আজ নড়াইল মুক্ত দিবস
নড়াইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আজ নড়াইল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নড়াইলের মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করার পর নড়াইল শত্রু মুক্ত হয়।
ওই সময় নড়াইলের এসডিও’র বাসভবনকে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সদর দপ্তর করা হয়েছিল। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন নড়াইলের এসডিও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী লোহাগড়া হাইস্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও নড়াইলের সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিশাল বাহিনী গঠন করেছিলেন।
৬ এপ্রিল সকালে হানাদার বাহিনী দুটি জেট বিমান হতে নড়াইল শহরের ওপর ব্যাপক গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে প্রচুর ক্ষতিসাধন করলে নড়াইল শহর জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর একটি দল নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় রেস্টুরেন্ট মালিক মন্টুকে গুলি করে আহত করে। এদিকে লোহাগড়ার ইতনা ও আড়িয়ারায় মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবির খোলার কারণে মধুমতি-নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্প থেকে ২৩ মে পাকবাহিনী গানবোট যোগে ইতনা গ্রামে ঢুকে ৫৮ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুক্তিকামী হাজার হাজার মানুষের অংশ গ্রহণে নড়াইলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে ওঠে। বিভিন্ন অঞ্চলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চলে তুমুল যুদ্ধ। নড়াইল চিত্রা নদীর পাড়ে (প্রধান ডাকঘরের পাশে) মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। এছাড়া নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের তরফদার পরিবারের স্কুল শিক্ষক আতিয়ার রহমান তরফদার, আব্দুস সালাম তরফদার, রফিউদ্দিন তরফদার, মাহতাব তরফদার, আলতাব তরফদার, মোকাম মোল্যা, কাইজার মোল্যা ও মকবুল হোসেন সিকদারকে ধরে এনে হত্যা করে শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেতরে গণ-কবর দেয় পাকবাহিনী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান আলেক বলেন, “দেশ হানাদার মুক্ত করার আকাংখা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলে প্রবেশ করে। অক্টোবর মাস হতেই এ অঞ্চলের মুক্তিপাগল মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মাতে থাকে যে হানাদার বাহিনী আর বেশিদিন টিকতে পারবে না। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকেই নবগঙ্গা নদীর উত্তর ও পূর্বাঞ্চাল হানাদার মুক্ত হয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডাররা লোহাগড়া থানার পাকবাহিনীকে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেও তারা আত্নসমর্পণ করেনি। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করলে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলে পাকবাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।
৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ চালালে পাকবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে বাগডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান শহীদ হন। ওই দিনই শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত ৪০ জন পাক মিলিটারি আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা চর্তুদিক থেকে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ শুরু করলে মিলিটারিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এখানে একজন পাক মিলিটারি নিহত হয় এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। প্রবল শীতকে উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা সারা রাত শহরে বিজয় উল্লাস করতে থাকেন। স্লোগানে স্লোগানে শহর প্রকম্পিত করে তোলেন। ১০ ডিসেম্বর দুপুর একটা ১৫ মিনিটে নড়াইলকে পাক হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
নড়াইল মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আজ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
ঢাকা/শরিফুল/টিপু