বিলুপ্তির পথে বুনন শিল্পী বাবুই পাখির বাসা
যশোর (অভয়নগর) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
গাছের ডালে ঝুলছে নলখাগড়া আর হোগলাবনের ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে বানানো নান্দনিক ছোট্ট খুপরি ঘর। এ যেনো হাওয়ায় ভাসতে থাকা ঝুলন্ত বাড়ি। একটা সময় সহজেই চোখে পড়লেও এখন আর তেমন পড়ে না। বলছিলাম বুনন শিল্পী বাবুই পাখির বাসার কথা।
গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বাসা নিয়ে একটা সময় প্রতিদিন খেলা করলেও শহরের মানুষের কাছে হয়তো অজানা। তবে কবি রজনীকান্ত সেন তার ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় দারুণভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই তাঁতি পাখির সঙ্গে। পাখির বয়ানে গেয়েছেন স্বাধীনতার স্তুতি। ‘পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা/ নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।
নাম তার বাবুই। বুনন শিল্পী, কারুশিল্পী কিংবা তাঁতি পাখি নামেও ডাকেন অনেকে। দলবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত এই পাখিরা লোকালয়ের উঁচু গাছে বাস করতে পছন্দ করে। গ্রামীণ জনপদে এদের বেশি দেখা যায়। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত করে রাখে পরিবেশ। আর এদের বাসার দিকে তাকালে মুগ্ধ না হয়ে থাকার উপায় নেই।
মে থেকে সেপ্টেম্বর বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। পুরুষ বাবুই বাসা বোনে। বাসার কাজ অর্ধেক হলে স্ত্রী বাবুই তা দেখে, পছন্দ হলে জুটি বাঁধে। দুই থেকে চারটি ডিম দেয় স্ত্রী বাবুই। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে প্রায় দুই সপ্তাহ। বাচ্চা উড়তে শেখে ৩০ দিনের মধ্যে। এরা বীজ, ধান, ভাত, পোকা ও ঘাসজাতীয় খাবার খুঁটে খুঁটে খায়।
কঠোর পরিশ্রমী বাবুই নিজেই নিজের বাসা নির্মাণ করে। ওল্টানো কলসির মতো দেখতে এই বাসা তৈরিতে ব্যবহার করে নলখাগড়া আর হোগলাবনের ঘাস।
এরপর দেয় পাতার আস্তরণ। ঠোঁটে কেটে ও পেটে ঘষে মসৃণ করা হয় সেই আস্তরণ। প্রথমে নিচের দিকে ছিদ্র রাখা হয়, পরে ডিম দেওয়ার সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিচের দিকে থাকে লম্বালম্বি দরজা। এর মাঝে বেলকনি হিসেবে একটি সুতার মতো জায়গা। এই পথে তারা চলাফেরা করে।
হালকা বাদামি ও কালচে হলদেটে বাবুইয়ের সেই কিচিরমিচির ডাক আজ আর তেমন একটা শোনা যায় না। নানা কারণে বিলুপ্তির পথে শৈল্পিক পাখি বাবুই।
ঢাকা/প্রিয়ব্রত ধর/ইমন