শীতে জবুথবু উত্তরের জনজীবন
রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। তিন দিন ধরে আকাশ মেঘলা থাকায় দেখা মিলছে না সূর্যের। রাত হলেই কুয়াশার জালে ঢাকা পড়ছে পুরো জনপদ। কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়।
রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরো জানা যায়, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি, সৈয়দপুর ১৪ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
নগরীর তাজহাট এলাকার মনিরুজ্জামান বাবু নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “তীব্র ঠাণ্ডার কারণে দিনের শুরু থেকেই কাজকর্ম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। শীত থেকে বাঁচতে মানুষের শরীরে উঠছে মোটা কাপড়। তিনদিন ধরে দেখা নেই সূর্যের। ফলে অনেকটা কষ্টে আছেন এ জেলার মানুষ।”
এদিকে শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। সকালে ও রাতে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে। শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি এবং নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, “সর্বাধিক শীতপ্রবণ এলাকাগুলোর শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে এবার শীত বাড়ার সাথে সাথে নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা একটু বেশি।”
সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শীতজনিত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি শীত নিবারণে পরিবার থেকে যথাযথ পদক্ষেপ বা সচেতনতার তাগিদ দেন তিনি।
রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, “শীতার্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ইতোমধ্যেই শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। আরো বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।”
তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শীতার্তদের অভিযোগ, এখনো পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতবস্ত্র পৌঁছায়নি। ফলে এসব এলাকায় শীতের প্রকোপ বেশি অনুভূত হচ্ছে।
অন্যদিকে, রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “শীতের এই প্রবণতা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। ঠাণ্ডার তীব্রতা কমাতে সূর্যের দেখা না পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে। এসময় শিশু ও বয়স্কদের শীত থেকে বাঁচতে আলাদা কেয়ার নেয়ার পরামর্শ দেওয় হচ্ছে।”
এদিকে শীতের এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ আরও জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ঢাকা/আমিরুল/ইমন