নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ নিয়ে গুজবের ছড়াছড়ি
ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম
খাকদোন নদীর মাঝে চালতা গাছটি দাঁড়িয়ে আছে
কেউ বলছেন নদীর মাঝে চালতা গাছ দাঁড়িয়ে থাকার আগের রাতে একটি অপরিচিত পাগল নেচেছিল এই গাছের নিচে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন জিনের কারসাজি, অনেকে মন্তব্য করেছেন অলৌকিকভাবে নদীর মাঝে গাছটি দাঁড়িয়ে আছে। কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম এ বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনেও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তথ্য তুলে ধরেছে, যা নিয়ে চলছে সমালোচনা।
ঘটনা খাকদোন নদীর বরগুনা সদরের ঢলুয়া এলাকার। গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে খাকদোন নদী ভাঙতে ভাঙতে একটি চালতা গাছের চারপাশ বিলীন হয়ে গেছে। গাছটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে, নদীর মাঝে অলৌকিকভাবে গাছটি দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছে।
এরপর থেকে শুরু হয় গুজবের ছড়াছড়ি। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে চালতা গাছ দেখতে ভিড় জমায় ঢলুয়া এলাকাবাসীসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা।
গাছে থাকা চালতা খেলে সব ধরনের রোগ থেকে মুক্তি মিলবে মনে করে অনেকে নৌকা নিয়ে চালতা পেড়ে খেয়েছেন। চালতা শেষ হওয়ার পর অনেকে বলেছেন, ওই গাছের পাতা খেলেও মিলবে সব ধরনের রোগ থেকে মুক্তি।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব উল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘খাকদোন নদীর তীরে চালতা গাছটি ছিল সরকারি জমিতে। প্রাকৃতিকভাবে এ গাছটি বেড়ে ওঠে। ঢাকা-বরগুনা নৌরুটে লঞ্চ চলাচলের জন্য বিভিন্ন সময়ে নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ লঞ্চঘাট থেকে বিষখালী নদী মোহনা পর্যন্ত ড্রেজিং করে থাকে। গত বছর অপরিকল্পিতভাবে খাকদোন নদী ড্রেজিং করায় ভাঙন শুরু হয়েছে এই এলাকায়। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলেছিল। মাস ছয়েক আগে আমি দেখেছি, চালতা গাছের শিকড় জিও ব্যাগ পেঁচিয়ে ধরেছে। গত দুই মাস ধরে এখানে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। চালতা গাছটি ধীরে ধীরে ডাঙা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীর মধ্যে চলে গেছে।’’
একই এলাকার বাসিন্দা হাসনাত মিয়া বলেন, চালতা গাছটি নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, এটি অন্যরকম দেখতে মনে হয়। তবে এখানে আতঙ্কের কিছু নেই। ভাঙনের কবলে পড়ে চালতা গাছটি রাস্তার পাশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
স্থানীয় অনেক বাসিন্দারা জানান, বরগুনা-বড়ইতলা সড়কটি পাথরঘাটা উপজেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না করলে সড়কটি নদীতে চলে যাবে। জিন, ভূতের কারসাজি বলে যারা গুজব ছড়িয়েছে, তারা এলাকার বদনাম করেছে। অনেকে চালতা গাছের ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে এলাকাটি ভুতুড়ে বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এখানে এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
ঢলুয়া এলাকার বাসিন্দা মো. দুলাল এ এলাকায় বসবাস করেন ৩০ বছরের বেশি সময়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, অতি উৎসাহে কিছু সাংবাদিক এটাকে অলৌকিক, আবার কেউ কেউ ভৌতিক বলে প্রচারণা চালিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে এমন বিষয় আসার পরে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা কিছুটা আতঙ্কিত হয়েছেন।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘ঢলুয়া এলাকায় কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙন হচ্ছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি নতুন করে গাইড ওয়াল করে দিয়েছি। চালতা গাছটি গাইডওয়াল এর বাহিরে ছিল। তাই ভাঙনের কবলে পড়ে গাছটি নদীর মাঝ বরাবর চলে যায়।’’
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল রাইজিংবিডিকে বলেন, এখানে অলৌকিক কিছু নেই। চালতা বা চালতা পাতা খেলে রোগ মুক্তির বিষয়টি গুজব।
তিনি আরও বলেন, অনেকে জিন ভূতের কারসাজি বলে গুজব ছড়িয়েছেন। যারা এটি করেছেন তারা ঠিক করেননি। ঢলুয়া এলাকার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই।
ঢাকা/বকুল