গোপালগঞ্জে মধুমতি রক্ষায় বাধা ৫০ অবৈধ স্থাপনা
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মধুমতি নদীর বিলরুট চ্যানেলের ভাঙন থেকে সড়ক, বাজার ও বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্পের কাজ দুই মাস আগে শুরু হয়। ইতোমেধ্যে ডাম্পিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে, নদী ভাঙন এলাকায় অবৈধ স্থাপনার কারণে সিসি ব্লক স্থাপনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ না হলে বর্ষা মৌসুমে মধুমতির ভাঙনের কবলে পড়ে সড়কসহ অন্যান্য স্থাপনা বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বার্হী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, “গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে মধুমতি নদীর বিলরুট চ্যানেলে ২৫০ মিটার এলাক জুড়ে অনেক আগে ভাঙন দেখা দেয়। এতে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক মহাসড়ক, মঞ্জুরুল হক খান কলেজ, মসজিদ, উলপুর বাজার, বজারের আশপাশের কিছু বাণিজ্যিক ভবন হুমকির মুখে পড়ে। সরকার এসব স্থাপনা রক্ষায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।”
তিনি আরো বলেন, “দরপত্র আহ্বান শেষে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। তবে নদী ভাঙন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এ কারণে সিসি ব্লক স্থাপন করা যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ না হলে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়তে পারে সড়কসহ অন্যান্য স্থাপনা।”
এ কর্মকর্তা বলেন, “সেখান থেকে ৫০টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। অধিকাংশ স্থাপনা এখনো রয়ে গেছে। এগুলো আপসারণের জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দ্রুত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। তারপর কাজটি সম্পন্ন করা হবে।”
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে মধুমতি নদীর তীরে থাকা একটি অবৈধ স্থাপনায় ওষুধের ব্যবসা করেন সুকুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, “আমাদের দুই থেকে তিনবার মৌখিকভাবে দোকান সরিয়ে নিতে বলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে নোটিশও দিয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পর আমি আমার দোকানের পাকা অংশ ভেঙে দিয়েছি। পাকা অংশের সামনে অস্থায়ী টিনসেড ঘরে এখন ব্যবসা করছি। আট বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। তাই আমাদের পুনর্বাসন করার দাবি জানাচ্ছি। পুনর্বাসন করা হলে, ছেলে-মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারব।”
উলপুরে অপর অবৈধ স্থাপনার মালিক মো. মিন্টু শেখ বলেন, “আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যতটুকু ছেড়ে দিতে বলেছে, আমি ততটুকু ছেড়ে দিচ্ছি। উচ্ছেদের আগেই সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি।”
নদী তীরের সরকারি জায়গায় মুদি দোকান পরিচালনাকারী তনু বলেন, “নোটিশ পেয়েছি। কিন্তু কোথায় যাব? আমাদের জায়গার ব্যবস্থা করলে দোকান সেখানে সরিয়ে নেব।”
উলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মনির হোসেন বলেন, “ইতোমধ্যে কেউ কেউ অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকের স্থাপনা এখনো রয়ে গেছে। সরকার এখানে নদীর ভাঙনরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। বাজার ও সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”
স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেনজীর কনস্ট্রাকনের সাইড ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম নবী বলেন, “পাকা ভবন নির্মাণ করে নদীর পাড় অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। এ কারণে সেখানে সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ করা যাচ্ছে না। তাই অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। যত দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হবে, তত দ্রুত আমরা কাজ সম্পন্ন করতে পারব।”
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহসিন উদ্দীন বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড মধুমতি নদীর বিলরুট চ্যানেলের ভাঙনরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে। তারা নদীর পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা সড়িয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে আমাদের সহায্যের জন্য জানায় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ