অনন্য দৃষ্টান্ত বদরগঞ্জে ২০ যমজ শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়
আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম
বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০ জন যমজ শিক্ষার্থী রয়েছে
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্প্রতি নজর কেড়েছে ব্যতিক্রমী ঘটনায়। বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা করছে ২০ জন যমজ শিক্ষার্থী। একসঙ্গে এত যমজ শিশুর উপস্থিতি যেমন বিরল ঘটনা, তেমনি এটি বিদ্যালয়ের পরিবেশে অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬০৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জনই যমজ । শিশুশ্রেণি থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত— প্রায় প্রতিটি ক্লাসে রয়েছে জমজ শিক্ষার্থী। প্রথমে তাদের চেহারার মিলের কারণে শিক্ষক ও সহপাঠীরা চিনতে অসুবিধায় পড়লেও ধীরে ধীরে তাদের নাম, আচরণ ও স্বভাব দেখে আলাদা করতে পারছেন।
যমজ শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, যা তাদের পড়াশোনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের চেহারার মিল এবং দুষ্টুমিতে ক্লাসে মজার ঘটনা ঘটে। শিক্ষক ও সহপাঠীরা প্রতিনিয়ত দারুণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন। সহপাঠীদের মধ্যে জমজদের নিয়ে মজার সম্পর্ক বিরাজ করে।
একজন শিক্ষক বলেন, ‘‘তাদের নাম ধরতে বা আলাদা করতে মাঝে-মধ্যে ভুল হয়ে যায়। তবে জমজদের একসঙ্গে থাকা এবং তাদের দুষ্টুমি ক্লাসের পরিবেশ প্রাণবন্ত রাখে।’’
অভিভাবকরাও তাদের যমজ সন্তানদের জন্য বিশেষ মনোযোগ দেন। তাদের শুধু চেহারার মিল নয়; খাবার, স্বভাব, এমনকি অসুস্থতার ক্ষেত্রেও মিল দেখা যায়। বিদ্যালয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে তাদের আলাদা পরিচর্যা এবং বিশেষ নজরদারি করা হয়।
যমজ সন্তান লালন–পালনের বিষয়ে মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘‘জমজ সন্তান লালন–পালন করা কষ্টের-আনন্দের। তাদের জন্মের পর দুই বছর স্বামী-স্ত্রী রাতে ঘুমাতে পারিনি। কান্নাকাটি করত। মনে হতো, সব ফেলে কোথাও পালিয়ে যাই। পরক্ষণেই ফুটফুটে যমজ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে যেতাম। ছেলের চেয়ে মেয়েটা আমার বেশি মেধাবী। তাদের চাহিদা, রুচিবোধ আলাদা। ছেলে খেতে ভালোবাসে মুরগির রোস্ট। মেয়েটার পছন্দ পোলাও, মাংস ও মিষ্টি। যতই ঝগড়া করুক, একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকতে পারে না।’’
নিশাত মুনির (১০) এবং এএসএম মুনতাসির মুবিন যমজ ভাই–বোন। বাড়ি বদরগঞ্জের বালুয়াভাটা গ্রামে। জানতে চাইলে নিশাত মুনির বলে, ‘‘ভাই আমার সঙ্গে শুধু ঝগড়া করে।’’ এ সময় কথা টেনে বোনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে মুবিন বলে, ‘‘আমি না, তুমিই বেশি ঝগড়া কর।’’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়নুল ইসলাম শাহ বলেন, ‘‘আমাদের বিদ্যালয়ে যমজ শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থাপনা চালু করেছি। তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুত্ব ও খুনসুটিতে পুরো বিদ্যালয় প্রাণবন্ত থাকে।’’
১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ১৩ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। প্রতিবছর ভালো ফলাফলের মাধ্যমে জেলার সেরা বিদ্যালয়ের খেতাব ধরে রেখেছে। যমজ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শুধু বিদ্যালয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য নয়, এটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কীভাবে অনন্য পরিবেশ শিক্ষার্থীদের বিকাশে সহায়ক হতে পারে।
ঢাকা/বকুল