স্ত্রীকে ‘তালাক’ দেওয়া নিয়ে অদ্ভুত কাণ্ড
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আওয়ামী লীগ কর্মী বীনা মজুমদার ও তার স্বামী মিজানুর রহমান
আওয়ামী লীগ কর্মী স্ত্রী সম্প্রতি ফেসবুকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান লিখে স্ট্যাটাস দেন। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামীকে ঘিরে ধরে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় যুবদলের সাবেক এক সদস্য ও তার সমর্থকরা। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় ওই ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এমন অদ্ভুত কাণ্ডটি ঘটেছে রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার হাজরাপুকুর মহল্লায়।
ভুক্তভোগী দম্পতি হলেন- নগরের চন্দ্রিমা থানার হাজরাপুকুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও বীনা মজুমদার। মিজানুর রহমান ব্যবসায়ী। বীনা গৃহিনী। বীনা ২০১৩ ও ২০২৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. সনি। তিনি শাহমখদুম থানা যুবদলের সাবেক সদস্য।
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন, “আমি সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমাকে দেখে ওরা বলতে শুরু করে, ‘স্ত্রীর কামাই খাই’। আমি এর প্রতিবাদ করে বলি, আমি সারাদিন কাজ করি। স্ত্রীর কামাই কেন খাব? তখন আমাকে বলে, ‘তুই যদি তোর বউকে তালাক না দিস, এখান থেকে না পাঠাস, তাহলে খবর আছে।’ কেন ছাড়ব জানতে চাইলে তারা আমাকে গালি দেয় এবং মারধর শুরু করে।” মারধরে হাত, মাথা, কান ও কপালে আঘাত পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ কর্মী বীনা মজুমদার বলেন, “১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে কিছু দিন আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট করি। সেখানে জয় বাংলা লিখি। এ জন্য সনি আমাকে ফোন করে বলে, এসব লেখা যাবে না। তা না হলে খুব খারাপ হবে। আমি বলি, দল যখন ক্ষমতায় ছিল, আমি তো কারো সঙ্গে খারাপ কিছু করিনি। এরপরেও যদি আমার খারাপ হয় তাহলে হবে। তারপর ফোন রেখে দেয় সনি।”
তিনি আরো বলেন, “আজকে (শনিবার) আমার স্বামী সেলুনে যাচ্ছিল। ওরা তাকে ধরে বলে, ‘তোর বউ আওয়ামী লীগ করে, তুই তোর বউয়ের কামায় খাস। তুই তোর বউকে ছেড়ে দিবি।’ এরপর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। চিৎকার শুনে আমি গেলাম। সনি ছেলেটা কয়দিন আগেও আমাকে আম্মা বলে ডাকত। তাকে বলি, কী ব্যাপার সনি? এসব কী? সে বলে, কোনো আওয়ামী লীগের গান চলবে না। আমি বলি, আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ করব, মরে গেলেও করব। দল ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক। এরপরই আমার স্বামীর গায়ে হাত তোলে তারা। আমার স্বামী কোনো দল করে না।”
বীনা বলেন, “দল ক্ষমতায় থাকলেও আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার সঙ্গে এমন হবে কেন? আমার দোষ একটাই, আমি আওয়ামী লীগ করি। এ জন্য আমার স্বামীকে চাপ দিচ্ছে, যেন তিনি আমাকে ছেড়ে দেন। এটা কেমন কথা? দলের সঙ্গে সংসারের কি সম্পর্ক? যারা অন্যায় করেছে তারা শাস্তি পাবে। যাদের জন্য আওয়ামী লীগের এই অধপতন তাদের বিচার হোক। যারা অন্যায় করেনি তাদের কেন হেনস্থা করা হবে। এটা কেমন ন্যায় বিচার?’ আমরা এখন আতঙ্কিত। আমরা নিরাপত্তা চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক সদস্য মো. সনি বলেন, “আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বীনা মজুমদার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। এ জন্য তার স্বামীকে বলছিলাম। তখনই কয়েকটা ছেলে দুই-একটা কিল-ঘুষি মেরে দিয়েছে। এটা আমরা মীমাংসা করে ফেলেছি। স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।”
রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, “সন্ধ্যায় ঝামেলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনই এটা মীমাংসা করে নিয়েছেন। তাই পুলিশ ফিরে এসেছে। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করলে তদন্ত করে দেখা হবে।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ