পঞ্চগড়ের কিশোরীকে নিয়ে ভারতে ‘মিথ্যাচার’, সত্য জানালেন মা-বাবা
পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ভারতে আটক হওয়া পঞ্চগড়ের কিশোরী প্রিয়ন্তি রায় প্রমি। ডানে তার মা অনুরাধা রানী ও বাবা জয়দেব চন্দ্র রায়
সম্প্রতি অবৈধপথে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় বিএসএফের হাতে আটক হন পঞ্চগড়ের কিশোরী। আটকের পর ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে খবর প্রকাশ হয়। কিশোরীর ভারতীয় এক স্বজনের বরাতে প্রতিবেদনটিতে ছড়ানো হয়েছে মিথ্যাচার। যা দৃষ্টিগোচর হয় বাংলাদেশে থাকা মেয়েটির বাবা-মায়ের। ভিত্তিহীন খবরের নিন্দা জানিয়েছেন তারা।
পশ্চিমবঙ্গের ‘মাধ্যম’ নামে গণমাধ্যমে ভিডিওটি প্রকাশ হয়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়- ‘ইসকনের কন্যা হওয়াই অপরাধ! বাংলাদেশি কন্যা ভারতের হোমে’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কিশোরীর বাড়ি পঞ্চগড় পৌর শহরের উত্তর জালাসি পাড়া গ্রামে। খবরে অর্পিতা নাম প্রচার হলেও তার প্রকৃত নাম প্রিয়ন্তি রায় প্রমি। তার বাবার নাম জয়দেব চন্দ্র রায়। সে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মাধ্যম নামের গণমাধ্যমের খবরটিতে বলা হয়, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বাবার মেয়ে অর্পিতা ইসকন ভক্ত হওয়ায় বাংলাদেশে সে অত্যচারের শিকার। তার বাবা-মা অসুস্থ। বাংলাদেশ তাদের জন্য অনিরাপদ, সেখানে অত্যাচারিত হওয়ার ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে মেয়েকে ভারতের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তারা।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুরা খুবই বিপদে, হিন্দুদের ওপর সরকারি আক্রমণ চলছে। বিমাতা সুলভ আচরণ করছে পুলিশও। তাই তারা প্রাণভয়ে আইন ভেঙে ভারতে নিরাপত্তার জন্য আসছে।
প্রতিবেদনটিতে কিশোরীর স্বজন দাবি করা আরান্দ অধিকারীকে বলতে শোনা যায়, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছোট মেয়েদের কিডন্যাপ করে টর্চার করা হচ্ছে। তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে। এই মেয়েটিকেও টর্চার করা হচ্ছে, অপহরণ করবে বলে ভয় দেখানো হচ্ছিল। তাই প্রাণভয়ে চলে আসছে। বাবা-মায়ের সামনে যদি মেয়েকে টেনে নিয়ে যায়, তাহলে ওরা সেখানে থেকে কি করবে। এই দুঃখে চলে আসছে।
খবরটি দৃষ্টিগোচর হবার পর মেয়েটির বাড়িতে যায় রাইজিংবিডির প্রতিবেদক। প্রতিবেশী মুসলিমদের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে ভালো আছেন বলে জানান কিশোরীর বাবা-মা। বরং ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরটি নজরে আসার পর তারা বিব্রত হয়েছেন।
প্রিয়ন্তি রায় প্রমির মা অনুরাধা রানী বলেন, “আমার মেয়ের চোখে সমস্যা। ভারতীয় চিকিৎসকের চিকিৎসা চলছিল তার। অনেকদিন ধরে চিকিৎসা স্থগিত আছে। ভিসা বন্ধ থাকায় বৈধপথে ভারতে নেওয়া যাচ্ছিল না তাকে। তাই ওপারের (ভারত) আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে অবৈধপথে পাঠাইছি। কে জানতো এমন হবে?”
প্রিয়ন্তি রায় প্রমির বাবা জয়দেব চন্দ্র রায় বলেন, “আমরা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রেখে একসঙ্গে বসবাস করছি। ভারতীয় খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি এমন মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই।”
পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শারদীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী মনোরঞ্জন বনিক বলেন, “বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যা প্রচার করছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা নিরাপদে আছি, ভালো আছি। বাংলাদেশেকে অস্থিতিশীল করতে এবং বাংলাদেশের সম্মান বিশ্বের কাছে কমাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এমন বানোয়াট ও মনগড়া সংবাদ প্রচার করছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছি।”
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বলেন, “ভারতীয় মিডিয়া যেসব প্রচার করেছে সেসবের পুরোটাই ভুয়া সংবাদ। কিশোরীর বাসায় গিয়ে খবর নেওয়া হয়েছে। তার বাবা-মা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তারা ইসকন ভক্ত নয়।”
তিনি আরো বলেন, “মূলত ওই কিশোরী অসুস্থ। ভিসা ছাড়া চিকিৎসার জন্য অবৈধপথে ভারতে গিয়ে আটক হয়েছেন তিনি।”
ভারতীয় ওই গণমাধ্যমের তথ্য মতে, গত মঙ্গলবার অবৈধভাবে ভারতের উত্তর দিনাজপুর ফতেপুর বিওপি দিয়ে প্রবেশের সময় বিএসএফ আটক করে প্রিয়ন্তি রায় প্রমিকে। পরে তারা কিশোরীকে চোপরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আদালতে নেওয়া হলে বিচারক কোচবিহারের শহীদ বর্ধনা সৃতি আবাসিক হোমে পাঠিয়ে দেয় তাকে।
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ