ঢাকা     রোববার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩২

ঝালকাঠিতে ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেবা ব্যাহত

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৭:০৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
ঝালকাঠিতে ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেবা ব্যাহত

শুক্তাগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার

হত্যাসহ চার মামলার আসামি হয়ে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার এলাকায় অনুপস্থিত থাকছেন। এর ফলে দিনের পর দিনে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও নাগরিক সেবা মিলছে না। এতে স্থানীয়রা জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

যদিও ইউপি চেয়ারম্যান মোবাইল ফোনে দাবি করেছেন, তিনি এলাকায় থাকছেন এবং দাপ্তরিক কাজ করে যাচ্ছেন।

২০২১ সালের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিউটি সিকদার চেয়ারম্যন নির্বচিত হন। এরপর তিনি দলীয় সকল কর্মকাণ্ডে সরব ছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকাবের পতনের পরে কিছু দিন এলাকায় থাকলেও মামলার আসামি হওয়ায় এখান তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণ হারান শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার মো. আল-আমিন (৩৫)। ঢাকার পশ্চিম রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ মালগাঁও গ্রামের রহমান মাল বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন। এ মামলার ১৬৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে শুক্তাগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও রাজাপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিউটি সিকদারকে।

এছাড়াও শুক্তাগড় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের ৭৫ লাখ টাকার আয়রন ব্রিজের লোহার ভীমসহ অন্যান্য মালামাল চুরির অভিযোগে ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে আমলী আদালতে মামলা করেন। এ মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার ও ইউপি সদস্য মো. আসাদুল হক আসামি রয়েছেন।

সরকারি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাত ও পাওয়ার টিলার দেওয়া নাম করে ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদাররের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন শুক্তাগড় ইউনিয়নের কেওতা গ্রামের মামুন হাওলাদার ও বামনকাঠি গ্রামের রফিক। এ সব মামলা গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার। 

গত ৯ ডিসেম্বর শুক্তাগড় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, নিয়মিত চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার এলাকায় অনুপস্থিত থাকায় পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। 

শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামনখান গ্রামের বাসিন্দা নাসির হাওলাদার বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের মৃত্যু সনদ আনার জন্য অনেকবার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় তা পাইনি।’’ 

পিড়িং গ্রামের আবু বক্কর বলেন, ‘‘একটি চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট আনার জন্য কমপক্ষে ১০ বার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি। এত দিন ঘুরেও চেয়ারম্যানকে না পাওয়ায় তার স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি।’’

এ ব্যাপারে শুক্তাগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘‘আমি আজও (১৫ ডিসেম্বর) এলাকায় আছি। শুক্তাগড়ের সাঙ্গরে অবস্থান করে ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কাজ করেছি। গত বৃহস্পতিবারও আমি ইউনিয়ন পরিষদে অফিস করেছি। নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ সব শেষ মিটিং করেছি। ডিসেম্বর মাসের মিটিং ২২ তারিখ করব।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘একটি হত্যা মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে, যার বাদীকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর তিনটি মামলাও মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে।’’ 

শুক্তাগড় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. জাহিদুল আলম বলেন, ‘‘ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদারের সঙ্গে আমি পরিষদের শেষ মিটিং করেছি গত ১১ নভেম্বর। এর পরে দুই থেকে তিন দিন তিনি ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। ১৫ নভেম্বরের পর থেকে তার সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদে আমার দেখা হয়নি। এর মধ্যে আমি দাপ্তরিক কাছে বিভিন্ন সময়ে ডিসি অফিস ও ইউএনও অফিসে গিয়েছিলাম, এ সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের এসেছিলেন কি-না, তা আমার জানা নেই।’’ 

রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ বলেন, ‘‘শুক্তাগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিউটি সিকদারের এলাকায় অনুপস্থিতির বিষয়টা ইউপি সদস্যরা সভা করে আমাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এটা জেলায় পাঠিয়েছি। তদন্ত করে বিধিমোতাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।’’

ঢাকা/অলোক/বকুল 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়