কুষ্টিয়ায় বালুঘাট দখলে নিতে গুলি-অগ্নিসংযোগ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বালুঘাট দখলের সময় সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীর দুটি বালুমহাল দখল নিতে তাণ্ডব চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় গুলিবর্ষণ এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর করা হয়।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ফেরিঘাট বালুমহাল এবং মসলেমপুর ১২ মাইল বালুরঘাট এলাকায় সংঘর্ষ হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা সশস্ত্র মহড়া এবং উত্তেজনা চলে। এ ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার দিকে সশস্ত্র একদল সন্ত্রাসী মোটরসাইকেল নিয়ে ভেড়ামারার পুরাতন ফেরিঘাট বালুমহালে হামলা চালায়। মোটরসাইকেলে করে এসে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে বালু ব্যবসায়ীরা আড়ালে পালিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালায়। এ সময় মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বাহিরচর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও বালু ব্যবসায়ী সোহেল রানা ভুঁইয়া বাবু জানান, ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে একদল সন্ত্রাসী বালুঘাটে এসে জোর করে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে থাকে। এতে ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা ঘোষণা দেন, কোনো সন্ত্রাসীকে অতিরিক্ত চাঁদা দেবেন না। এ নিয়ে মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে বিএনপি নেতা তৌহিদুল ইসলামের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত রোকনের নেতৃত্বে ৭০-৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার বালুঘাটে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে এবং ককটেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় ১৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং পাঁচটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বিএনপি নেতা এবং সাবেক এমপি অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের ভাতিজা জহুরুল ইসলাম বিজলী জানান, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম চুনুর নামে ঘাট ইজারা ছিল। টাকা উঠাতেন জাকিরুল নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা। এ বালুঘাট দখল নিতে আধিপত্য বিস্তার করতেই রোকনের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী এ হামলা চালায়। আরেক বিএনপি নেতা বিপ্লব মালিথা বলেন, নাইন এমএম পিস্তল, শটগান, দোনলা বন্দুকসহ প্রত্যেকের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারা প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছেন।
ফেরিঘাটের বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সশস্ত্র এ বাহিনী পাশের ১২ মাইল বালুঘাট দখল নিতে চলে যান। সেখানেও একইভাবে তাণ্ডব চালান সন্ত্রাসীরা। বালুঘাটে থাকা বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম বিশু এবং তার ছেলে শামসুজ্জামান সবুজকে খুঁজতে থাকেন। এ সময় অন্তত ১০-১৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও কয়েকটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে শামসুজ্জামান সবুজ অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বিএনপি নেতা তৌহিদুল ইসলামের নির্দেশে তার ক্যাডার রোকন ও উজ্জ্বলের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘাটে প্রবেশ করে ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে দুই ব্যবসায়ী আহত হয়। আমার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।’’
বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম বিশু বলেন, বালুঘাটের দখল নিতে ক্যাডাররা এ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার পর ভেড়ামারা থানা পুলিশের দুটি দল বালুঘাট এলাকা পরিদর্শন করেছে।
এ ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় দুটি মামলার প্রস্ততি চলছে। এ বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে অভিযোগ অস্বীকার করে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সরকারের কাছ থেকে খাস আদায় করার জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে। যারা অভিযোগ করছেন, তারাই জোর করে বালুমহাল চালাচ্ছেন। তাদের বৈধতা নেই বরং গত দুই দিনে তারা তাণ্ডব চালিয়েছেন। আমার লোকদের ওপর গুলি করেছেন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার ৪৭ বছরের রাজনৈতিক জীবন নষ্ট করতেই একদল লোক কাজ করছেন। আমি সবকিছু বৈধভাবে কাজ করছি। এখানে কোনো মহড়া দেওয়া বা অবৈধপথ অবলম্বন করার প্রশ্নই ওঠে না।’’
এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল