স্বামীর হাড় ক্ষয়ের খবরে স্ত্রীর ডিভোর্স
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম
মায়ের সাথে হাঁটছেন অসুস্থ কাওসার
আজীবন সুখে-দুঃখে একসঙ্গে পথ চলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আড়াই বছর আগে ঘর বাধেন কাওসার ও মেঘলা দম্পতি। কিছু দিন আগেও জোৎস্না রাতে তুরাগ পাড়ে বসে স্বামীর হাত ধরে বলেছিলেন, ‘ছেড়ে যাবে না কোনদিন’। স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে মুচকি হেসে মেঘলা আরও বলেছিলেন, ‘‘তুমিই সব”। অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন মাড়িয়ে দু’জনের জগৎ এখন আলাদা।
এক দুর্ঘটনায় কাউসারের কোমরের একটি হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানা যায়, তার হাড় ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকের ওই কথা শুনে বাবার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ঘর ছাড়েন মেঘলা। কয়েকদিন পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর পাঠিয়ে দেন ডিভোর্স লেটার।
কাউসারের জন্য এটি ছিল খুবই কষ্টের সময়। একদিকে তার শারীরিক সমস্যা, অন্যদিকে মানসিক আঘাত। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যদি তার দুটি হাড়ই ক্ষয় হয়ে যায়, তবে তিনি একেবারে পঙ্গু হয়ে যাবেন।
এমন এক দুঃসময়ে মা-বাবা ও ছোট ভাই আগলে রেখেছেন কাওসারকে। তার বাবা বশির উদ্দিন ট্রাকে সহকারী হিসেবে কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। কাওসারের চিকিৎসার খরচ ও সংসার চালানো তার একার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না।
কাউসারের বাবা বশির উদ্দিন বলেন, “ছেলের এই অবস্থা দেখে আমাদের আর ভালো লাগে না। সারাদিন কষ্টের কাজ করি, তারপরও ঠিকমতো ওর চিকিৎসার খরচ চালাতে পারি না। ভেবেছিলাম বউটা অন্তত ওর পাশে থাকবে। কিন্তু সেও চলে গেল। যত কষ্টই হোক, শেষ পর্যন্ত ছেলেটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করব।”
কাউসার বলেন, “দুর্ঘটনার পর জীবনটা পুরো বদলে গেছে। হাড় ক্ষয়ের কথা জানার পরও আশা ছিল, স্ত্রী আমার পাশে থাকবে। তবে বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে সে চলে গেল, আর ফিরলো না। পরে ডিভোর্স পাঠালো। এখন শুধু মা-বাবা আছেন আমার পাশে। বাবা অনেক কষ্ট করে কাজ করছেন, মা আমাকে দেখভাল করেন। এভাবে হয়তো বেশিদিন চলতে পারব না।”
এ বিষয়ে কথা বলতে মেঘলার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
কাউসারকে চিকিৎসা দেওয়া ডা. মো. মোসরেকুল ইসলাম মনি বলেন, “ছেলেটির এই অবস্থায় তার স্ত্রী তাকে রেখে চলে গেছে, এটি খুবই দুঃখজনক। এই মুহূর্তে তার মানসিক সার্পোট জরুরি ছিল। তার জন্য চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল। তবে ঠিকমতো চিকিৎসা হলে কাওসার সম্পূর্ণ সুস্থ হবে বলে আশা করছি।”
ঢাকা/রেজাউল/সনি