বাস শ্রমিক ও সিএনজি চালকেরা দ্বন্দ্ব নিরসনে বসে মারামারি
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বাস শ্রমিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের মারামারি
রাজশাহীতে বাস শ্রমিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে মুখোমুখি হয়ে তারা আবারও মারামারি করেছেন। এতে দুইপক্ষ তাদের দুজন করে আহত হওয়ার দাবি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের ষষ্ঠীতলায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে তারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। দুইপক্ষের এই দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য পুলিশ বিএনপি নেতা মামুনকে দায়িত্ব দিয়েছিল। তবে মারামারির কারণে মীমাংসা হয়নি।
জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘‘পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের ডিসি আমাকে দুইপক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করে দিতে বলেছিলেন। সেই অনুযায়ী আমি বসি। মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন আসে কিন্তু সিএনজি চালকদের একটা গ্রুপ আসে, অন্যটি আসেনি। তাই মীমাংসা হবে না বলে দিই।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এ সময় হঠাৎ হারু গ্রুপ (সিএনজি মালিকদের একটি গ্রুপ) চলে আসে এবং আমার সামনেই মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই-তিনজনকে মারধর করে। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি লেগে যায়।’’
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিক আলী পাখি বলেন, ‘‘ওরাই সব সময় মারামারি করে, আর দোষ হয় আমাদের। আজ ওরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এতে দুজন আহত হয়েছে। এখন রাতে আবার পুলিশ-প্রশাসন উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার কথা।’’
রাজশাহী সিএনজি মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘মীমাংসায় বসে মোটর শ্রমিকেরা আমাদের কথা বলতে দিচ্ছিলেন না। আমাদেরই তারা মারধর করেছেন। এতে দুজন আহত হয়েছে। এক সিএনজি চালককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আর কোনো রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে মীমাংসায় বসতে রাজি না। পুলিশ-প্রশাসন থাকবে, আমরা দুইপক্ষ থাকব। এভাবে মীমাংসা করতে হবে। সন্ধ্যার পর ট্রাফিকের ডিসির অফিসে আবার বসার কথা আছে।’’
রাজশাহীতে প্রায়ই সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও বাসের শ্রমিকদের মধ্যে মারামারি হয়। গত সোমবার সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা তানোর উপজেলা সদরে বাসের ছয়জন চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরকে মারধর করেন। পরদিন বাস শ্রমিকেরা নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে লাঠিসোঁটা ও হাতুড়ি নিয়ে এসে রেলগেট সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলা করেন।
তারা ৭০ থেকে ৮০টি সিএনজি অটোরিকশার কাঁচ ভাঙচুর করে চলে যান। যাত্রী ও সিএনজি চালক মিলিয়ে ৪০ জনকে মারধরের অভিযোগ তুলেছে সিএনজি মালিক সমিতি। এর জের ধরে বুধবার রাজশাহীর হওটায় বিক্ষোভ করেন সিএনজি চালকেরা। দুটি বাসও তখন ভাঙচুর করা হয়।
ফলে রাজশাহী-নওগাঁ এবং রাজশাহী-আমনুরা রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতিবার থেকে বাস চলছে। গত সোমবার তানোরের ঘটনার পর ১৮ সিএনজি চালকের নামে মামলা হয়েছে। সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলার ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) নূর আলম সিদ্দিকী উভয়পক্ষকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বসেন। এ সময় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদকে দায়িত্ব দেন। তখন সিএনজি চালকেরাও বিষয়টি মেনে নেন। তবে মামুনের কার্যালয়ে বসার পর বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) আবারও দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ফলে মীমাংসা ভেস্তে যায়।
এ বিষয়ে কথা বলতে ট্রাফিক বিভাগের ডিসি নূর আলম সিদ্দিকীকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘নতুন করে মারামারির ঘটনা জানা নেই। এ রকম হলে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল