চা খেতে ভারতে গিয়ে আটক: মুক্তির আকুতি স্ত্রী’র
কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম
ভারতে গিয়ে আটক হোসেন আলী
হোসেন আলী (৪৪) পেশায় নাপিত। বর্তমানে তিনি মানসিক রোগী। মাঝে মাঝেই সে এক দুই মাসের জন্য এদিক ওদিক চলে যায়। পরে আবার বাড়ির কথা মনে হলে একাই বাড়িতে ফেরেন। তবে সেটা দেশের মধ্যে বলেই চলে আসতে পারেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লালন শাহ মাজারের পার্শ্ববর্তী গড়াই নদীর পাড়ে ছেউড়িয়া মন্ডলপাড়া এলাকার মৃত কাসেম আলী ও আনজুমান আরার ছেলে হোসেন আলী।
ওই এলাকার ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম বলেন, “হোসেন আলী এক সময় ঢাকায় সেলুনে কাজ করতেন। পরে ঢাকা থেকে এস ছেউড়িয়া লালন শাহ মাজারের পাশের একটি সেলুনের দোকানে বেশ কিছুদিন কাজ করার পর ছেড়ে দেয়। তারপর শুরু হয় তার মানসিক সমস্যা। এ সমস্যা হওয়ার পর থেকেই সে এদিক ওদিক ঘুর বেড়ায়।”
স্থানীয় চা দোকানী মেরু মন্ডল বলেন, “কয়েকদিন ধরে শুনছি হোসেন আলী অবৈধভাবে ভারতে গেছে। সেখানে গিয়ে চায়ের দোকানে বাংলাদেশের টাকা দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল হাজতে রয়েছে। সে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানাই।”
হোসেন আলীর দাদা রিকশা চালক জবেদ মন্ডল বলেন, “হোসেন আলী গরিব মানুষ। সরকারি জমিতে একটি টিনের চালা করে বসবাস করেন। কী কারণে কীভাবে ভারতে চলে গেল তা তো বলতে পারছি না। তবে তাকে ফেরত চাই।”
পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন
হোসেন আলীর স্ত্রী শেফালী খাতুন বলেন, “আমার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ। সে নিয়মিত পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাধীন। তার নিয়মিত ওষুধ খাওয়া লাগে। তবে ভারতে কেন ও কীভাবে চলে গেল বুঝতে পারছি না। আমার এক মেয়ে সুরাইয়া খাতুন (১৮)। তার মিরপুর উপজেলায় হালসায় বিয়ে দিয়েছি। আর একমাত্র ছেলে সুরাইম হোসেন (১২)। তাকে নিয়ে অভাবের সংসারে খুব কষ্ট করে দিনাতিপাত করছি। শেষে উপায় না দেখে শোন পাঁপড়ির কারখানায় প্রতিদিন দুইশ’ টাকা হাজিরার বিনিময়ে কাজ করে বহুকষ্টে দিন পার করছি। সরকারের কাছে স্বামীকে ফেরত পাওয়ার আবেদন জানাই।”
চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক মনজু বলেন, “হোসেন আলী একজন হতদরিদ্র মানসিক রোগী। সে বেশ কিছুদিন আগে প্রতিবন্ধী ভাতা জন্য আবেদন করেছে। হয়তো ভুলক্রমে চিলাহাটি থেকে সে ভারতে চলে গেছে। সে মানসিক রোগী হলেও কখনো কারো ক্ষতি করেনি। সরকারের মাধ্যমে তার মুক্তি ও বাংলাদেশে ফেরত দেবার দাবি জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়া থেকে চিলাহাটি ঘুরতে যান হোসেন আলী নামের এক বাংলাদেশি। সেখানে কুয়াশামাখা সকালে চা পান করতে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভুলে ভারতের কোচবিহার জেলার সীমান্ত গ্রাম ভাওলাগঞ্জে পৌঁছে যান। পরে সেখানকার একটি চায়ের দোকানে চা পানের পর বাংলাদেশি টাকা দিলে দোকানদার তাকে আটকে পুলিশে খবর দেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে কোচবিহারের হলদিবাড়ি থানা পুলিশ।
হোসেন আলীর পরিবারের সদস্যবৃন্দ
স্থানীয়রা জানায়, কাঁটাতারে বেড়া না থাকায় ভুলে হোসেন আলী নামের বাংলাদেশি ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম ভাওলাগঞ্জে প্রবেশ করে। সেখানে ভাওলাগঞ্জের মোড়ে এক চায়ের দোকানে চা পানের পর বাংলাদেশি ১০০ টাকার একটি নোট দেন দোকানিকে। পরে দোকানি বাংলাদেশি টাকা দেখে হলদিবাড়ি থানায় ফোন দেয়। পরে পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন ওই ব্যক্তির বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালি থানার ছেউরিয়া গ্রামে। তিনি ভারত-বাংলাদেশ উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন।
বাংলাদেশি চায়ের দোকান ভেবেই চা পান করতে ভারতে প্রবেশ করেছেন তিনি। হলদিবাড়ি থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার ওই বাংলাদেশির কাছ থেকে বাংলাদেশি ৬০০ টাকা এবং ২৩নং রকেট এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭ নভেম্বর তারিখের টিকিট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে তোলা হয়।
ঢাকা/সনি