ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৬ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জের ২ উপজেলায় প্রার্থী আছে, প্রাথমিকে পদ খালি নেই

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১২:১১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
কিশোরগঞ্জের ২ উপজেলায় প্রার্থী আছে, প্রাথমিকে পদ খালি নেই

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে প্রাথমিকে পরিচিত স্কুলের নাম সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। শিক্ষক রয়েছেন ২১ জন। এর মধ্যে, মাত্র ছয় জন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার। বাকি সব শিক্ষক হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বদলি হয়ে এসেছেন।

সদর উপজেলায় কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য নেই। অন্যদিকে, হাওরাঞ্চলের সুতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ৫টি পদের মধ্যে ২টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শুধু এই স্কুল নয়, প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি স্কুল শিক্ষক-সংকটে ভুগছে।

সদর উপজেলার কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী জানান, যোগাযোগ ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির অজুহাতে প্রাথমিক শিক্ষকরা হাওরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে বেশিদিন থাকতে চান না। বদলি হয়ে চলে যান জেলা শহর ও আশপাশের স্কুলগুলোতে। ফলে সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষকের পদ শূন্য হয় কম। দুই উপজেলায় প্রাথমিকে প্রার্থী থাকলেও পদ খালি নেই। অপরদিকে, বারবার পদ শূন্য হওয়ায় প্রতি নিয়োগেই চাকরির সুবিধা যাচ্ছে হাওর এলাকায়।

আরো পড়ুন:

তৌহিদ মিজান নামে এক জন বলেন, ‘‘নিয়োগ পেয়ে বছর খানিকের মধ্যে হাওরের শিক্ষক নানা কৌশলে বদলি হয়ে চলে যান সদরের স্কুলগুলোতে। ফলে আবার শূন্য হয়ে যায় হাওরের শিক্ষকপদ। পরবর্তী সময়ে এসব শূন্যপদে নিয়োগ হলে আবার সুযোগ পান হাওরের চাকরিপ্রার্থীরা। আর বঞ্চিত হন কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জের উজান এলাকার প্রার্থীরা।’’

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি করিমগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মো. শামছুল হক ফরহাদ বলেন, ‘‘নীতিমালা অমান্য করে অনিয়মের মাধ্যমে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাসহ হাওর এলাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষক বদলি হয়ে করিমগঞ্জে চাকরি করছেন। স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থলে সীমিত সংখ্যক শিক্ষকের বদলির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু, এখানে বেশির ভাগ শিক্ষক নদীভাঙন বা অন্যকোনো তদবিরে বদলি হয়ে এসেছেন। এ কারণে উপজেলায় কখনো শিক্ষকের পদ শূন্য হয় না। ফলে করিমগঞ্জের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে বদলি হয়ে উজান এলাকায় আসলে আবার সেখানেই শিক্ষকের পদ শূন্য হচ্ছে। পরবর্তীতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে ওইসব এলাকার প্রার্থীদের আবার চাকরির সুযোগ তৈরি হয়। করিমগঞ্জসহ উজান এলাকায় পদ শূন্য না হওয়ায় চাকরিও জোটে না আগ্রহীদের।’’

করিমগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, করিমগঞ্জের ১২৫টি স্কুলে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা ৭৩২ জন। এর প্রায় অর্ধেকেই বদলি হয়ে আসা শিক্ষক। আর কিশোরগঞ্জ সদরের ১৪৫টি স্কুলে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ৯৯৩ জন। যার ৭০-৮০ ভাগই বদলি হয়ে এসেছেন। এ প্রবণতা এখনো তীব্র। ফলে এই দুই উপজেলার বাসিন্দারা প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ পাচ্ছেন না বহু বছর ধরে।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন শাহীন বলেন, ‘‘সদরে অবসরজনিত কারণে কোনো পদ শূন্য হলে ঝড়ের বেগে বহিরাগতরা বদলি হয়ে চলে আসেন। ফলে নতুন নিয়োগে সদরের কোনো শূন্যপদ থাকে না। আর এ কারণে সদরের স্থায়ী বাসিন্দাদের চাকরি হয় না। নীতিমালা অনুযায়ী ২০ ভাগ বহিরাগত শিক্ষক থাকতে পারে। কিন্তু, সদরে বর্তমানে ৭০-৮০ ভাগ শিক্ষকই বহিরাগত।’’

হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বদলি হয়ে সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ে বর্তমানে চাকরি করছেন ১৪ জন শিক্ষক। তাদের কাছে বদলি হয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে হাওরে যোগাযোগের সমস্যা, সন্তানের লেখাপড়া, ভালো পরিবেশসহ নানা কারণের কথা উল্লেখ করেন।

তারা জানান, সবাই চায় উন্নত এলাকায় পোস্টিং পেতে। আমরাও সুযোগ কাজে লাগিয়ে সদরে এসেছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগে কিশোরগঞ্জে চাকরি পেয়েছেন ২৮৮ জন। এর মধ্যে, কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে চাকরি পেয়েছেন মাত্র দুই জন করে। অন্যদিকে, ইটনায় ৩৮ জন, মিঠামইনে ২৮ জন ও অষ্টগ্রামে ৪০ জনের চাকরি হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে হাওর থেকে জেলা শহরে বদলির এ প্রবণতা কমতে পারে। বদলির কারণে বৈষম্য সৃষ্টি হোক, ব্যক্তিগতভাবে আমিও চাই না।’’

ঢাকা/রুম্মন/রাজীব


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়