চাটমোহরের শিশু কল্পনা হত্যার রহস্য উদঘাটন

নয় বছরের শিশু কল্পনা খাতুনকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন তার প্রতিবেশী চাচা নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল (১৭)। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) রেজিনূর রহমান।

শিশু কল্পনা হত্যার সাতদিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত প্রধান অভিযুক্ত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে চাটমোহর উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশু কল্পনা হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল বলে জানায় পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল চাটমোহর উপজেলার চর-মথুরাপুর গ্রামের আনিছুর রহমান মল্লিকের ছেলে। নিহত কল্পনা একই গ্রামের মৃত তাজের খাঁয়ের মেয়ে। তারা প্রতিবেশী।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজিনূর রহমান জানান, শিশু কল্পনা গ্রেপ্তারকৃত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামালের প্রতিবেশী ভাতিজী হয়। তাদের বাড়িও পাশাপাশি। গত ১৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাতে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গুড়া থানাধীন দহপাড়া খানকা শরিফে ইসলামী জালসা ছিল। নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল জালসায় গিয়ে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জালসার পার্শ্ববর্তী স্কুলমাঠে গিয়ে ৫০ টাকার গাঁজা কিনে সেবন করেন। এরপর শরীর খারাপ লাগায় তিনি বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

বাড়ি ফেরার পথে স্কুলমাঠের কোনায় নাগরদোলার পাশে কল্পনাকে বসে থাকতে দেখেন নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল। তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দু'জন পায়ে হেঁটে রওনা হন। নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল বাড়ির রাস্তায় না গিয়ে কল্পনাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে চাটমোহর উপজেলার পৈলানপুর গ্রামে চাকলারদিয়ার বিলের মধ্যে একটি লিচু বাগানে নিয়ে যান। এ সময় শিশু কল্পনা তাকে বাড়িতে না নিয়ে কোথায় নিয়ে এসেছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি নিয়ে চলো বলে কান্নাকাটি শুরু করে।

তখন লোকজন জেনে যাবে এমন ভয়ে কল্পনার গলা চেপে ধরে নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল। শ্বাসরোধ মারা যায় কল্পনা। পরে কল্পনার পড়নের পায়জামা খুলে গলায় ফাঁস দিয়ে আবারো শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যান অভিযুক্ত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামাল।

মেয়েকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামালের সঙ্গে দেখা হলে কল্পনার খোঁজ জানতে চান তার মা। তিনি জানান, কল্পনাকে তিনি দেখেননি।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে লিচু বাগান থেকে কল্পনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কল্পনার মা তাসলিমা বেওয়া বাদী হয়ে সেদিন চাটমোহর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে অনুসন্ধান শেষে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্ত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজিনূর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নুরুজ্জামান মল্লিক ওরফে নুরজামালকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যায় নিজের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।