ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

যে কারণে গভীর রাতে মিছিল নিয়ে থানায় ছাত্রীরা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪  
যে কারণে গভীর রাতে মিছিল নিয়ে থানায় ছাত্রীরা

নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদ করায় রাজশাহীর একটি মেসে এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় গিয়ে মামলা করেন

রাজশাহীর একটি ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গভীর রাতে একযোগে ছাত্রীনিবাস থেকে বের হয়ে মিছিল করে থানায় যান ছাত্রীরা। এ সময় তারা ঘটনার বিচার চেয়ে নানা স্লোগানও দেন। থানায় ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ছাত্রীনিবাসের মালিকসহ চার জনের নামে মামলা হয়েছে।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, “ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) তাদের আদালতে পাঠানো হবে।”

নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ছাত্রীনিবাসটির নাম ‘ঝলক-পলক মেস’। ছাত্রীনিবাসটিতে প্রায় ৩০০ ছাত্রী থাকেন। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করার জের ধরেই ঘটনার সূত্রপাত। দিনভর ছাত্রীদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বলে তাদের অভিযোগ। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে প্রথমে দুজনকে আটক করে।

আরো পড়ুন:

রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রীরা মামলা করতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বোয়ালিয়া থানার দিকে রওনা দেন। তখন ছাত্রীরা জানান, তাদের বেশিরভাগ ছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতির জন্য এই ছাত্রীনিবাসে আছেন। এই ছাত্রীনিবাসে টাকা বেশি নেওয়া হলেও খাবারের মান খুবই খারাপ।

ছাত্রীরা জানান, রবিবার সকালে নিম্নমানের খিচুড়ি পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। তিনি এই ছাত্রীনিবাসে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ সময় মালিকপক্ষ ওই ছাত্রীকে জানায়, ছাত্রীনিবাসে ওঠার সময় তিনি যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সেখানে আছে যে ৭ মাসের আগে ছাত্রীনিবাস ছাড়া যাবে না। ওই ছাত্রী চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে মালিক জানান, আইনজীবী ছাড়া এটা দেখা যাবে না।

নিজের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র দেখতে আইনজীবী লাগবে কেন, এমন প্রশ্ন তুললে ছাত্রীনিবাসের মালিক তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। মালিকের দুই ছেলে ঝলক ও পলক এসে ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এতে অন্য ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঝলক ও পলক তার বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে ছাত্রীদের হুমকি দেন যে, তারা তাদের রাজশাহীতেই থাকতে দেবেন না।

ছাত্রীদের অভিযোগ, সকালের ওই ঘটনার পর মালিকপক্ষ দিনভর তাদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের বলা হয়, রাতে ফটকের তালা খুলে দেওয়া হবে। তখন সবাইকে একযোগে ছাত্রীনিবাস ছাড়তে হবে। তখন ছাত্রীরা ফোন করে তাদের বন্ধুদের সহযোগিতা চান।

এরপর রাত ১১টার দিকে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী গিয়ে ছাত্রীনিবাসের তালা ভেঙে ছাত্রীদের বের করেন। খবর পেয়ে সেখানে যান নগরের ওসি মেহেদী মাসুদ। তিনি ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। এ সময় তিনি মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থানায় আসতে বলেন। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করার পর রাত ২টার দিকে তারা থানা থেকে বের হন।

ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, “আমি খবর পেয়েই সেখানে গিয়ে দুজনকে আটক করি। তাদের নিয়ে আসার সময় ছাত্রীদের বলি, মামলা করার জন্য যেন তারা চলে আসেন। তারা যখন আসছিলেন, তখন অভিযান চালিয়ে আরো একজনকে আটক করা হয়। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তিন জনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলায় নাম না জানা আরো কয়েকজন আসামি আছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

রাতে বোয়ালিয়া থানায় ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “ছাত্রীনিবাসটিতে মালিক ও মালিকেরা ছেলেরা এক ছাত্রীকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন, শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে যায় এবং তিনজনকে হেফাজতে নেয়।”

তিনি আরো বলেন, “রাজশাহীতে অনেক মেস। এটা আমাদের মাথাতেই আসেনি যে, স্টুডেন্টরাও এ রকম থ্রেটের মুখে থাকে। এটা এখন আমাদের নলেজে আসল। আমরা সজাগ থাকব। কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হলে ৯৯৯ বা থানায় ফোন করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়