ঢাকা     বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১০ ১৪৩১

শীতের শুরুতেই পদ্মায় জেগে উঠছে চর

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৬:৪৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
শীতের শুরুতেই পদ্মায় জেগে উঠছে চর

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় জেগে উঠতে শুরু করেছে চর

শীত মৌসুমের শুরুতেই চর জেগে উঠছে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে। এতে একটু পরপরই আটকে যাচ্ছে নদীতে চলাচলকারী বিভিন্ন প্রকারের নৌকা। আটকে যাওয়া এসব নৌকা টেনে গভীর পানিতে নিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে মাঝিদের। নদী পারাপারে এখন সময় বেশি লাগছে বলে ভোগান্তিতে পড়েছেন চরবাসী।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, “ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের পর থেকেই শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় পানি সংকট দেখা দেয়। এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। ২০২৬ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তারপর এমনভাবে চুক্তি করতে হবে যেন সারা বছর পদ্মায় পানির ভালো প্রবাহ থাকে। এ জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।”

ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের পর গঙ্গা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্ট দিয়ে পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফারাক্কা থেকে এ পয়েন্টের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। পাংখার উজানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এখন পদ্মা নদীতে অসংখ্য চর জেগে উঠছে। ফলে গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোদালকাটির চরের বাসিন্দারা পদ্মা পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন। মাঝে মধ্যেই আটকে যাচ্ছে তাদের নৌকা।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শহরের বড়কুঠি এলাকায় প্রতিদিন পদ্মার পানির গভীরতা পরিমাপ করে। পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত গেজ রিডার এনামুল হক জানান, ভরা মৌসুমে গত ৫ অক্টোবর পদ্মার পানির সর্বোচ্চ গভীরতা পাওয়া গিয়েছিল ১৬ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর থেকেই পানি কমতে শুরু করে। গত ৩১ অক্টোবর পানি কমে গভীরতা ১৩ দশমিক ০৩ মিটার হয়। গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় পানির গভীরতা পাওয়া যায় ৯ দশমিক ৫৬ মিটার। অথচ আগের দিন সন্ধ্যা ৬টার সময়তেও পানির গভীরতা ছিল ৯ দশমিক ৭৭ মিটার।

এখন প্রতিদিন পানি কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পুরো শীতজুড়েই পানি কমবে। শহর সংলগ্ন পদ্মা নদীর ভেতরেও চর পড়তে শুরু করেছে। আবার যখন ভরা মৌসুমে ভারত পানি ছাড়বে, তখন পদ্মায় প্রাণ ফিরবে। এর আগ পর্যন্ত ধু ধু বালুচর বিরাজ করবে। সেখানে চাষাবাদ হবে।”

গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে যেতে হয় পদ্মা নদী পার হয়ে। এ জন্য উপজেলার বিদিরপুর, ফুলতলা, রেলবাজার ও গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে খেয়াঘাট রয়েছে। এসব ঘাটের মাঝিরা জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যেই তাদের নৌকা আটকে যাচ্ছে ডুবোচরে। তখন লগি দিয়ে নৌকা টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে গভীর পানিতে। এতে  ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

চরের কারণে নদীতে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে নৌকার

ফুলতলা খেয়াঘাটের মাঝি হাবিবুর শেখ বলেন, “নদী ইতোমধ্যে দুইভাগ হয়ে গেছে চর পড়ে। এ জন্য ঘাট থেকে এখন আড়াআড়ি সোজা নৌকা চালানোর উপায় নেই। ঘাট থেকে উজানে একটা সরু পথ দিয়ে নৌকা নিয়ে যেতে হচ্ছে। সেখানে এতই ডুবোচর যে একটু পর পরই নৌকা আটকে যাচ্ছে। এ জন্য নৌকায় বেশি মানুষ কিংবা মালামাল তোলা যাচ্ছে না।”

নদী পার হয়ে প্রায়ই এপারে আসতে হয় চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামকে। তিনি বলেন, “বছরের তিনটা মাস আমরা পদ্মায় পানি পায়। তখন নৌকা ঠিকমতো চলে। এপারে উঠে ওপারে চলে যায়। বাকি সময় ভোগান্তির শেষ নেই। এখনই ডুবোচরে পর নৌকা আটকে যাচ্ছে। আর কিছুদিন পর একবার নৌকায় উঠে মাঝের বড় চরে একবার নামতে হবে। এরপর পায়ে হেঁটে ওই চর পার হয়ে আবার নৌকায় উঠতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “পদ্মায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। ভারতকে চাপ দিতে হবে যেন তারা আমাদের পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করতে না পারে। কারণ, পানি থাকে না বলে শুধু চরবাসী ভোগান্তি পোহায় তা নয়। সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চল খাঁ খাঁ মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে চাষাবাদে, মানুষের জীবন-জীবিকায়।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়