জাহাজে ৭ খুন: রহস্য উদঘাটনের দাবিতে ধর্মঘটে নৌযান শ্রমিকেরা
চাঁদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ধর্মঘট বিষয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মো. হারুনুর রশিদ
চাঁদপুরে জাহাজে সাত খুনের রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাচ্ছেন নৌযান শ্রমিকেরা।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা ও ঢাকা-চাঁদপুর লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘‘খুনিদের দ্রুত ধরে আইনের আওতায় আনার দাবিতে এ ধর্মঘট পালিত হবে। অভিযুক্ত যার কথা উঠেছে মো. ইরফান, যদি তিনি জাহাজে উঠেনও এবং সবাইকে মারেনও; তাহলেও কী করে সম্ভব? লস্কর পদে থেকে ৫-৬ মাস কাজ করে ইঞ্জিন স্ট্রাট দেওয়া? এটা কোনো মতেই সম্ভব নয়।’’
তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘যদি মেনেও নেই ওই ইরফান ইঞ্জিন একাই স্ট্রাট দিলেন, তিনি কী করে আবার গ্রিজও কন্ট্রোল করলেন? আবার ২-৩ ঘন্টা জাহাজও চালালেন এবং খালেও নিয়ে গেলেন? আবার নোঙ্গর উঠাইছে। নোঙ্গর উঠিয়ে জাহাজ আবার খালে নিয়ে এঙ্কার করছেন। একজন ব্যক্তির পক্ষে কী করে এত কাজ একা সম্ভব?’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘একটি জাহাজে গ্রিজ ও ইঞ্জিনে অনেক লোকের প্রয়োজন। জাহাজের অন্যান্য কাজেও কয়েকজন লোক লাগে। এ লোকগুলো ছাড়া জাহাজ চালানোর কাজ একা ইরফান কী করে সম্পন্ন করবে? একজনের পক্ষে কি সম্ভব এটা নৌযান নেতারা মানতে নারাজ।’’
হারুনুর রশিদ আরও বলেন, ‘‘এর আগে নৌপুলিশ বলল, জাহাজ থেকে মোবাইলসহ সব কিছুই উদ্ধার হয়েছে। তবে এখন র্যাব দিয়ে জজ মিয়ার নাটক সাজানো কেন?’’
আহত জুয়েল উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে না দাবি করে হারুন বলেন, ‘‘জুয়েলকে দেখতে সরকারের একজন উপদেষ্টাও এখন পর্যন্ত যাননি। হাসপাতালে তিনি ভালো কক্ষও পাননি। এত বড় একটা ঘটনায় কোনো উপদেষ্টা জুয়েলকে দেখতে না যাওয়ায় আমরা হতাশ। যদি ইরফান খুনি হয়ও, ওর সঙ্গে আরও খুনি আছে এবং তাদের ধরছে না কেন?’’
কর্মসূচি প্রসঙ্গে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের এ নেতা বলেন, ‘‘রাত ১২টা থেকে মালবাহী ট্যাংকার, কোস্টার সব বন্ধ থাকবে। সরকার গড়িমসি বা বিলম্ব করলে যাত্রীবাহী জাহাজগুলোর সংগঠনও যেকোনো সময় এ ধর্মঘটে একাত্মতা পোষণ করার আভাস দিয়েছে। তবে এখন যাত্রীবাহী নৌযানগুলো নৌপথে চলবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাত ১২টার পর থেকে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হবে। যে যেখানে আছেন, সেখানে থাকবেন। যাহাজ চলাচল করবে না। লোডিং আর আনলোডিং বন্ধ থাকবে।’’
এর আগে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হারুন জাহাজে খুন হওয়া ৭ জনের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, রাষ্ট্রীয় শহীদী মর্যাদায় দাফন এবং নৌযানগুলোর নিরাপত্তার দাবিতে চাঁদপুর নৌথানা প্রাঙ্গণে নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা চাইনিজ কুড়ালের ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং গ্রেপ্তারকৃত ইরফানের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলেছে কি-না তা এখনো জানায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও ইরফান একা জাহাজ চালাতে কতটা পারদর্শী সেটাও সরাসরি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেননি কেউ।
এ ঘটনায় ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেছেন জাহাজ মালিক মাহাবুব মোর্শেদ।
ঢাকা/জয়/বকুল