চাকরির নামে ট্যুরিস্ট ভিসায় কম্বোডিয়া, অভিনব প্রতারণা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সংবাদ সম্মেলনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চার যুবক
কম্বোডিয়ায় গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চার যুবক। ভালো কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভনে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কম্বোডিয়া পৌঁছানোর পর জানতে পারেন তাদের এক মাস মেয়াদি ট্যুরিস্ট ভিসায় পাঠানো হয়েছে। এরপর তাদের একটি কক্ষে বন্দি করে রাখে ওই চক্রের সদস্যরা। চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। পরে দেশ থেকে টাকা পাঠানো হলে সেই টাকায় দেশে ফেরেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় একটি পত্রিকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের কয়েকজন নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। জানান, তারা এই চক্রের প্রতারণায় ঋণের ফাঁদে আটকে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। তারা এই চক্রের মূল হোতা কাশেম আলী ও সোনালী এন্টারপ্রাইজ ট্রাভেলস্ মালিক বেলাল ভূঁইয়ার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, প্রতারণার শিকার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের চরলামছি গ্রামের বাসিন্দা জয় চন্দ্র সরকার, জাবেদ হোসেন, জুয়েল হোসেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সুদেব চন্দ্র বনিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
তারা সংবাদ সম্মেলনে জানান, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে কাশেম আলীর মাধ্যমে তারা কম্বোডিয়ায় যান। তাদের বলা হয়, মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যাবে। ভিসার মেয়াদ ২ বছর। থাকা কোম্পানির এবং খাওয়া নিজের। এনিয়ে তাদের সঙ্গে কাশেম আলী একটি চুক্তিও করেন। কিন্তু চুক্তিমত তাদের সঙ্গে কিছুই করা হয়নি, উল্টো করা হয়েছে নির্মম নির্যাতন। তবে এর পেছনে সোনালী এন্টার প্রাইজ নামীয় ট্রাভেলস এর মালিক বেলাল হোসেন ভূঁইয়াও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
প্রতারণার শিকার হওয়া জাবেদ হোসেন বলেন, “১৭ সেপ্টেম্বর দর্জির কাজের কথা বলে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকায় কাশেম আলী আমাকে কম্বোডিয়া পাঠায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আমাকে ১ মাসের ভ্রমণ ভিসায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাইলে তার লোকজন সেখানে আমাকে মারধর করে। পরে আমাকে ৯ দিন কাজ করিয়ে কিছু টাকা দেয়। ওই ভিডিও দেখিয়ে আমার এলাকার আরও কয়েকজনকে কাশেম কম্বোডিয়ায় নেয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে আমি আর কাজ করতে পারছিলাম না। এ বিষয়ে জানতে কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। একপর্যায়ে তিনি আমার বাবাকে মারধর করে স্ট্যাম্পে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে আমাকে আনার ব্যবস্থা করে দেন। কম্বোডিয়া থেকে আসতে আমার বিমান ভাড়াসহ ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসব ঘটনায় সোনালী এন্টারপ্রাইজ নামের ট্রাভেলসের মালিক বেলাল হোসেন ভূঁইয়াও জড়িত।”
জাবেদের বাবা আবু তাহের বলেন, “কাশেম আমাকে মেরে আঙ্গুলের ছাপ নিয়েছে। পরে ৬৫ হাজার টাকা দিলে আমার ছেলে তাদের হাত থেকে রেহাই পেয়ে দেশে আসে।”
ভুক্তভোগী অন্য তিনজনের অভিযোগ, “কম্বোডিয়ায় পৌঁছানোর পরই কাশেম আলীর লোকজন জোরপূর্বক আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায়। পরবর্তীতে একটি কক্ষে বন্দী করে রাখে। সেখানে চালানো হয়েছে নির্যাতন। পরবর্তীতে সেখানে বন্দি অন্য লোকের মোবাইল দিয়ে দেশে যোগাযোগ করা হয়। এতে পরিবারের লোকজন থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললে ওই স্ট্যাম্প দিয়ে ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে।”
সোনালী এন্টারপ্রাইজের মালিক বেলাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “ওই চার যুবক আমার ট্রাভেলসে ম্যানপাওয়ার করেনি। বেলাল নামে আমার এক আত্মীয় কম্বোডিয়ায় থাকে। তিনিই তাদেরকে সেখানে নিয়েছেন, কাজও দিয়েছেন। কিন্তু তারা যেখানে থাকতো, সেখানে পাশেই কম্বোডিয়ার লোকজনকে মারধর করে তারা। তবুও তাদেরকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা থাকেনি, চলে আসছে। আমার কাছে তারা যাওয়ার জন্য সহযোগীতা চেয়েছে, আমি শুধু সহযোগীতা করেছি। তাদের অভিযোগ সত্য নয়।”
অভিযুক্ত কাশেম আলী বলেন, “কম্বোডিয়ায় গিয়ে কয়েকদিন পরই ওই চার যুবক চলে আসে। কাজ নিয়ে দেওয়ার কথা বললেও তারা থাকেনি। এখন তারা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে। যিনি তাদেরকে নিয়েছে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। এ নিয়ে বসে সমস্যা সমাধান করা হবে।”
ঢাকা/লিটন/টিপু