মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে ৩ হত্যা
মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ঘটনাস্থল থেকে আক্তার শিকদারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ
মাদারীপুরের কালকিনিতে আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য দলাদলি ও চেয়ারম্যান-মেম্বার দ্বন্দ্বে ইউপি আতাউর রহমান আক্তার শিকদার, তার ছেলে মারুফ শিকদার ও তার সহযোগী সিরাজ চৌকিদারকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বাহিনীর বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোরে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসেরহাট ব্রিজের নিচে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নিহতরা হলেন- বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মতি শিকদারের ছেলে ও ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আক্তার শিকদার (৪৪), আক্তারের ছেলে মারুফ শিকদার (২২) ও আক্তার মেম্বারের অনুসারী খুনেরচর গ্রামের রশিদ চৌকিদারের ছেলে সিরাজ চৌকিদার (২৫)।
এসময় ঘটনায় হামলাকারীরা এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে শতাধিক ককটেল ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী। অপরদিকে আতাউর রহমান আক্তার শিকদার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এরা দুজনই হাসিনা সরকার পতনের পরে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করতেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, দীর্ঘ বছর ধরে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের সাথে একই ইউনিয়নের মেম্বার আতাউর রহমান আক্তার শিকদারের সাথে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারই জেরে তিন দিন আগে আক্তার শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় সুমনের লোকজন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন আক্তার শিকদার, তার ছেলেসহ কয়েকজন অনুসারী। রাতে আক্তার তার বোনের বাড়িতে অবস্থান করে। বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার ভোরে সুমনের লোকজন অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্তার, তার ছেলে ও তার অনুসারীদের ধাওয়া করে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে খাসেরহাট বিজ্রের নিচে নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে ফেলে যায়। এসময় হামলাকারীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে শতাধিক ককটিল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে স্থানীয় লোকজন মৃতদেহ দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আক্তার শিদকার ও তার ছেলে মারুফ শিকদারের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মুমূর্ষ অবস্থায় আক্তারের অনুসারী সিরাজ চৌকিদারকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান। পুলিশ তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে মাদারীপুর মর্গে প্রেরণ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আক্তারের বাড়ি ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়েছে। বাড়ির এখানে সেখানে আগুনের ধোঁয়া উড়ছে। ঘরের কোনো আসবাবপত্র নেই।
সব ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। ভয় আর আতঙ্ককে এলাকার পুরুষ শূন্য। শুক্রবার হলেও আক্তারের বাড়ির সামনে অনস্থিত দক্ষিণ বাঁশগাড়ী জামে মসজিদে কোনো মুসল্লি নেই। তালা ঝুলছে। দেখে মনে হচ্ছে, কোনো ধ্বংসপুরী।
ভাঙচুর করার পর আক্তার শিকদারের বাড়ি
এ ব্যাপারে নিহত আক্তার শিকদারের পিতা মতি শিকদার বলেন, ‘‘আমার ছেলে তার ছেলেকে নিয়ে পোড়া বাড়ি-ঘর দেখতে আসছিল। খবর পেয়ে ভোরে সুমনের লোকজন আমার ছেলে ও নাতিকে কুপিয়ে হত্যা করছে। দীর্ঘ দিন ধরে সুমন আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে আসছে। তার প্রভাব ছড়াইতেই আমার পরিবারকে শেষ করে দিলো।’’
আক্তারের বোন মুন্নি আক্তার বলেন, “আমার ভাই সুমনের ভয়ে দীর্ঘ দিন ধরে স্বপরিবারে ঢাকাতে বসবাস করে। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবর শুনে বাড়িতে আসছিল। কিন্তু সুমনের লোকজন তাদের বাঁচতে দিলো না। নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করলো। আমার একটি মাত্র ভাই ও ভাতিজাকে বাঁচতে দিলো না। আমি এই হত্যাকারীদের বিচার চাই।’’
অভিযোগের বিষয় চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরো বলেন, “স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারই ফলে এ হত্যা হয়েছে বলে ধারণা করছি।”
ঢাকা/বেলাল/সনি