মাদারীপুরে ৩ খুনে এলাকা পুরুষশূন্য, তদন্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে পুলিশের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে তিন খুনে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। বাজারে লোক সমাগম কমে গেছে।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দল মাবুদ।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) তিনি নিহত ৩ জনের বাড়িতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী, ভূক্তভোগি পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করেন। এ সময় পুলিশের এ কর্মকর্তা ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে পুলিশ জিরো টলারেন্সে বলে দাবি করেন।
জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার আর স্থানীয় দ্বন্দ্বের জেরে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আতাউর রহমান আক্তার শিকদার, তার ছেলে মারুফ শিকদার ও সহযোগি সিরাজ চৌকিদারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বাঁশগাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের কারণেই এই ৩ জন খুন হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন ও নিহতের পরিবারের দাবি।
বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজার
শুক্রবার ভোরে বাঁশগাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। বর্তমানেও এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। শনিবার বিকেলে নিহতদের মরদেহ দাফন করা হয়। নিহতের পরিবার থেকে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
ওই ইউনিয়নে খাসেরহাট বাজারের মুদি দোকানি আলী আশরাফ বলেন, “৩ হত্যার পর বাজার ঘাটে লোকজন কম। বেচাবিক্রিও কমে গেছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। অনেকেই এলাকা ছাড়া।”
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ৩ খুনের ঘটনার তদন্ত কার্যক্রমে মাঠে পর্যায়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী আর র্যাব সদস্যরা ব্যতিব্যস্ত। তারা দোষীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন। পুলিশের হেড কোয়ার্টাস থেকেও বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানায় পুলিশ। শনিবার ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামানকে নির্দেশ দেন। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সাইফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমসহ পুলিশের উর্ধ্বতন মহল।
বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে পুলিশের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদ বলেন, “ঘটনাটিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এভাবে ৩ জন মানুষকে হত্যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। ফলে হেড কোয়ার্টার্স থেকে বিষয়টি মনিটারিং করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে বিষয়টি অনুধাবনের জন্যে আসা হয়েছে। এঘটনার সাথে সম্ভব্য খুঁটিনাটি দেখা হচ্ছে। তবে এখানে চেয়ারম্যান সুমন আর মেম্বার আক্তারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা ছিল, বিষয়টি এমনই বোঝা যাচ্ছে। তারপরেও তদন্ত করে স্পষ্ট হওয়া যাবে।”
নিহত আতাউর রহমান আক্তার শিকদারের বাবা মতিন শিকদার বলেন, “আমাদের বাড়ি-ঘর কয়েকদিন আগে সুমন চেয়ারম্যানের লোকজন পুড়ে দেয়, আর সেই পোড়া বাড়ি ঢাকা থেকে দেখতে আসছিল আক্তার আর আমার নাতি মারুফ। তাদের উপর হামলা করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সুমন ও তার লোকজন। আমার আর কোন ছেলেও নাই, নাতিও নাই। আমার পুরো বংশ শেষ করে দিলো। আমি এদের বিচার চাই।”
ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ও তার ভাই রাজন বেপারীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাদের ঘরে তালা ঝুলছে।
ঢাকা/বেলাল/টিপু