ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

উপহারের জুতা ৫৩ বছর পরছেন হামিদ

শাহীন আনোয়ার, মাগুরা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:৩৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
উপহারের জুতা ৫৩ বছর পরছেন হামিদ

বড় ভাইয়ের দেওয়া জুতা ৫৩ বছরে আগলে রেখেছেন আব্দুল হামিদ

আব্দুল হামিদ। বয়স ৭৬ বছর। তিনি একজোড়া চামড়ার জুতা পায়ে দিচ্ছেন ৫৩ বছর ধরে। অভাবে নয়, বড় ভাইয়ের উপহার দেওয়া জুতা তিনি যত্ন করে রেখেছেন। প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে পরেন।

আব্দুল হামিদের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের আউনাড়া গ্রামে। পেশায় তিনি কৃষক।

আব্দুল হামিদ জানান, দেশ স্বাধীনের পর ঢাকায় বড় ভাই লুৎফর রহমানের বাসায় বেড়াতে যান। তার বড় ভাই তখন সেনাবাহিনীর অনারারি ক্যাপটেন পদে কর্মরত ছিলেন। বড় ভাই তাকে কালো রঙের বাটা কোম্পানির একজোড়া চামড়ার জুতা কিনে দেন। ভাইয়ের দেওয়া সেই জুতা তিনি আজও পরেন।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে আব্দুল হামিদের সঙ্গে মহম্মদপুর উপজেলা সদর বাজারে কথা হয়। তিনি জুতা কালি করতে এসেছেন। তিনি জানান, প্রায় ৫৩ বছর ধরে বড় ভাইয়ের কিনে দেওয়া জুতা পায়ে দেন তিনি। মাঝে-মধ্যে কালি করাতে আসেন। কালি করলে জুতা আবার নতুনের মতো দেখায়। কয়েকশত টাকা দিয়ে তাকে জুতা জোড়া কিনে দেন। তখন এক সের চাউলের দাম ছিল ৫ আনা। (১৬ আনায় ১ টাকা)। তখন এত দামি জুতা খুব কম মানুষ পরতেন। এ জুতার টাকায় জমিসহ অনেক কিছু কেনা যেত।

আব্দুল হামিদ এরপর অনেক জুতা কিনেছেন বা বদলেছেন। তবে এই জুতার প্রতি তার ভালোবাসা অনেক। দীর্ঘদিনেও জুতা নষ্ট হয়নি। তিনি ফেলেও দেননি। মাঝে-মধ্যে পরেন। কালি করে তুলে রাখেন। জুতা নতুন কেনার পর অনেকে দেখতে আসতেন। হাতে নিয়ে দেখতেন। পায়ে দিয়ে হেঁটে দেখতেন। স্বজনেরা কেউ পায়ে দিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি ও শহরে যেতেন। সেসময়ে সবার চামড়ার জুতার কেনার সামর্থ ছিল না। আবার টাকা থাকলেও জুতা মফস্বলে পাওয়া যেত না। 

অশীতিপর বৃদ্ধ বড় ভাই লুৎফর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘‘আপনার কাছে (প্রতিবেদক) শুনে বিষয়টি জানতে পারলাম। স্মৃতি হাতড়ে বিষয়টি মনে করতে অনেক সময় লেগেছে।’’ আব্দুল হামিদ বড় ভাইয়ের উপহার আজও যত্নে রেখে দিয়েছেন জেনে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।  

আব্দুল হামিদের স্ত্রী, তিন ছেলে ও তিন মেয়ের সংসার। ছেলেরা কৃষি কাজ, ব্যবসা ও চাকরি করেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। নিজে পড়ালেখা করতে পারেননি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। 

বড় ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, তাঁদের বাবার জুতাজোড়া বড় চাচার কিনে দেওয়া। ভাইযের প্রতি ভালোবাসা থেকে জুতাটি তিনি যত্ন করে আজও পায়ে দেন।

মহম্মদপুর উপজেলা সদরের চর্মকার নারাণ রবিদাশ জানান, আব্দুল হামিদ গ্রাম থেকে উপজেলা শহরে মাঝে-মধ্যে জুতা জোড়া কালি করতে আসেন। বেশিরভাগ সময় তিনি হাতে করেই জুতা জোড়া নিয়ে আসেন। ৫০ বছরের বেশি জুতার বয়স শুনে অবাক হন তিনি। 

ঢাকা/বকুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়