আলোচনায় ছিল এমপি আনার হত্যাকাণ্ড
শাহরিয়ার আলম সোহাগ, ঝিনাইদহ || রাইজিংবিডি.কম
মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের সঙ্গে ভারতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার (ডানে)
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের মাটিতে নিহত হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তাকে হত্যার ঘটনাটি ছিল ২০২৪ সালে দেশব্যাপী অন্যতম আলোচিত ঘটনা। নিহতের পরিবারের দাবি, দ্রুত মরদেহের খণ্ডাংশ পেলে এলাকায় দাফন করতে পারবেন তারা।
এদিকে, সাত মাসেও হত্যাকাণ্ডের জট খোলেনি। সাবেক এই সংসদ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১২ মে দুপুরে চিকিৎসার কথা বলে দর্শনা চেকপোস্ট পর্যন্ত যান এমপি আনার। পরে দর্শনা-গেদে ইমিগ্রেশন পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর একটি ভ্যানে চড়ে রওনা দেন ভারতের অভ্যন্তরে। কলকাতায় গিয়ে আনার তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ছিলেন। কলকাতার অদূরে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার বরাহনগর থানার মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি। এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার দুই দশকের বেশি সময় ধরে সখ্য ছিল।
১৪ মে থেকে পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আনারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ ছিল। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কলকাতায় যোগাযোগ করে খোঁজ নিতে বলা হয়।
এদিকে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় লিখিত ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন গোপাল বিশ্বাস। ২২ মে দুপুরের দিকে কলকাতার গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়, কলকতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনে হত্যা করা হয়েছে আনারকে। মুহূর্তের মধ্যেই ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এ খবর ছড়িয়ে পরে। নেতাকর্মীরা ভিড় করতে থাকেন কালীগঞ্জ শহরে আনারের বাসভবনের সামনে। এরপর থেকেই আনার হত্যার জড়িতদের শাস্তির দাবি ওঠে।
গত ৬ জুন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের আগে গ্যাস বাবুর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল দুইটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। সেই মোবাইল উদ্ধার করতে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ আসে তখনকার ডিবি প্রধান হারুন। তবে কোনো মোবাইল উদ্ধার করতে পারেননি তারা। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১ জুন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এই হত্যা মামলায় মিন্টুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর জেলাজুড়ে শুরু হয় এমপি আনার হত্যা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি। সেই থেকে কারাগারেই আছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা।
সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে কলকাতায় গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। কয়েকদিন পরেই গণমাধ্যমে খবর বের হয় আনারের সঙ্গে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিলেছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সাবেক সংসদ সদস্য আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন জানান, গত ২৫ নভেম্বর তিনি ভারতে গিয়েছিলেন এবং ২৯ তারিখে কলকাতায় ডিএনএ টেস্টের নমুনা দিয়েছেন। ভারতের সিআইডির এক কর্তকর্তা আনঅফিশিয়াল জানিয়েছেন যে, ডিএনএ মিলেছে। কিন্তু কোনো কাগজপত্র এখনো পাননি।
তিনি আরো বলেন, “তারা আমাকে সব কিছু ম্যানেজ করে বাবার মরদেহের খণ্ডাংশ দেবে বলে জানিয়েছে। আমাদের পরিবারের দাবি, দ্রুত বাবার মরদেহের খণ্ডাংশ পেলে এলাকায় এনে দাফন ও জানাজার ব্যবস্থা করতে পারবো।”
কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, “নিহত সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার মেয়ের ডিএনএ মিলেছে কিনা এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
ঢাকা/মাসুদ