ঢাকা     শনিবার   ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ১ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৯:১৩, ১ জানুয়ারি ২০২৫
নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিমাদ্রী খীসা শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছেন

দেশে এবার শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণে আনুষ্ঠানিক উৎসব হয়নি। উৎসব ছাড়াই নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার (১ জানুয়ারি) মহানগরী ও জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আংশিক বই হাতে পেয়েছে। কোনো কোনো শ্রেণির কোনো বই আসেনি, আবার কোনো কোনো শ্রেণির আংশিক বই এসেছে। তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব বই পৌঁছে যাবে বলে কর্মকর্তারা জানান।

চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরের বাইরে উপজেলা পর্যায়ে একমাত্র ফটিকছড়ি উপজেলার প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথমদিন কোনো নতুন বই হাতে পায়নি। তবে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে তারা বই পাবে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। 

চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বই বিতরণে সার্বিক তথ্য থেকে জানা গেছে, এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসব ছিল না। জেলা শহরের বাইরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সব বই পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে শিক্ষা অফিসগুলো।

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরের ৬টি থানা শিক্ষা অফিস ও জেলার ১৬টি উপজেলা মিলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ জন। এবার নতুন বইয়ের চাহিদা ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ১৮৭ কপি। এর মধ্যে বছরের প্রথম দিন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের বই আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে বিতরণের আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘যে বই এসেছে সেগুরো আমরা চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার সব স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছি। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই না পেলেও প্রথমদিনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে। শুধু ফটিকছড়ি উপজেলা ছাড়া সব স্কুলে বই চলে গেছে। আমরা আশা করছি, ৫ জানুয়ারির মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো যাবে।’’

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা জানান, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বছরের প্রথম দিনে সব বই দেওয়া যায়নি। নগরের কোতোয়ালি ও পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সাতটি বই বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই আংশিক বিতরণ করা হয়েছে। তবে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নগরীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

রংপুর 
বছরের শুরুর দিনে রংপুর জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বল্প পরিসরে বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সকল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভাগীয় নগরীর বেশ কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, নতুন বইয়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় শিক্ষার্থীরা শতভাগ বই পায়নি। মাধ্যমিকে এখন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ বই আসেনি। মাধ্যমিকে বই এসেছে ৩৫ শতাংশ। প্রাথমিকে ৪৫ শতাংশ বই এলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোনো বই আসেনি।

রংপুর জেলা শিক্ষা অফিস আশা করছে, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শতভাগ বই বিতরণ সম্ভব হবে।

রংপুর নগরীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে উৎসবমধুর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিলেও পঞ্চম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির অধিকাংশ শিক্ষার্থী বই পায়নি। এ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাক রঞ্জন রাজু বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এবার অষ্টম শ্রেণিতে উঠবে। নতুন বইয়ের প্রতি বরাবরই তার খুব আগ্রহ। বই না পেলে তার যে আনন্দ সেটা থাকবে না। এ বিষয়ে আগে থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’’

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিভাগের আট জেলায় প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার বইয়ের প্রয়োজন হলেও মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে প্রায় ৪৭ লাখ ৭৮ হাজার বই পাঠানো হয়। শতকরা ৫৬ শতাংশ বই এখনো আসেনি।

রংপুর জেলায় ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯০ বইয়ের মধ্যে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪২৫টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৮১৯ মধ্যে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭৬টি ও পঞ্চগড়ে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪০৪ মধ্যে ২০ হাজার ৫৪৮টি বই পেয়েছে।

দিনাজপুরে ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৩১ মধ্যে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ২১০টি, নীলফামারীতে ১৮ লাখ ১১ হাজার ৮১৫ মধ্যে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭৫টি, লালমনিরহাটে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬২ বইয়ের মধ্যে ৮ লাখ ১০ হাজার ৩৭২টি, কুড়িগ্রামে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৪ মধ্যে ৮২ হাজর ৩৮০টি ও গাইবান্ধায় ১৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮০২টি বইয়ের মধ্যে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৪টি পেয়েছে।

রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কিছু বই এলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বেশিরভাগ বই আসেনি। তবে নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে ৩ হাজারে বেশি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। বইয়ের প্রয়োজন ৩ কোটি ২ লাখ ২৪ হাজার। সেখানে মঙ্গলবার পর্যন্ত বই এসেছে ৩৫ শতাংশ।

রংপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এনায়েত আলী জানান, চলতি বছর পর্যাপ্ত বই হাতে না পাওয়ায় পূর্বের বছরের মতো এবার উৎসব করে বই বিতরণ হয়নি। ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে তিনটি করে বই দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আজ তবে পর্যায়ক্রমে সব শাখাগুলোতে বই বিতরণ আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা তার। বছরের শুরুর দিন আজ ৭ শতাংশ বই বিতরণ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আর রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘‘বই পর্যায়ক্রমে আসছে। আশা করি জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সব বই পেয়ে যাবো এবং বিতরণও সম্পন্ন হবে। এবার কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকলে আমরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বই বিতরণের জন্য আমাদের কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন। সব শ্রেণীর জন্য বই বিতরণ প্রথম দিনের সম্ভব হয়নি তবে অন্য বই যখনই আসবে, তখনই বিতরণ করা হবে। আমরা আশা করছি, শিক্ষার্থীরা দ্রুতই বই পাবে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’’

সিলেট
সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার প্রাথমিকের তিনটি শ্রেণির শতভাগ বই এসেছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই এখনো আসেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ। 

মাধ্যমিক শ্রেণিতে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার বই এসেছে। বাকিগুলো কাল-পরশুর মধ্যে বই পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেলা ১১টার দিকে নগরীর সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে পরিদর্শন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করেন। 

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ জানান, জেলার ১৩টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ বই দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই আসার পথে রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকি বই বিতরণ সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি।

মাধ্যমিক শ্রেণিতে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার বই এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, ‘‘যেসব শ্রেণির যেসব বই প্রস্তুত আছে, তা সব উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেগুলো বাকি আছে আগামীকালের মধ্যে পৌঁছে যাবে। পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের জন্য এ বছর কিছু বই আসতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ১৫ তারিখের মধ্যে সকল বিদ্যালয়ে সকল বই বিতরণ হয়ে যাবে।’’

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট সরকারি অগ্রগামী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পেলেও ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি। লাবীব আহমদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘নতুন বছরে নতুন বই পেয়ে খুশি।’’

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘‘এ বছর বই উৎসব হয়নি। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি-না তা পরিদর্শনে এসেছি। যে পরিমাণ বই পেয়েছি, তা সব উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।’’

ঢাকা/রেজাউল/নুর/আমিরুল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়