কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে হবিগঞ্জের মানুষ, অপেক্ষা শীতবস্ত্রের
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা
তীব্র শীতে জবুথবু হবিগঞ্জের মানুষ। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। জেলার শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ভবঘুরে কিংবা শ্রমজীবী, পাহাড় ও গ্রামের নিম্নআয়ের মানুষগুলো ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন।
বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে বিপদে আছেন পরিবারের সদস্যরা। শীতের দাপটে শহর, পাহাড় ও গ্রামাঞ্চলের অনেকেই খড়কুটো আর টায়ার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কনকনে ঠান্ডায় হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের এমন দুর্ভোগের দৃশ্য দেখা গেছে।
জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা পাহাড়ের কালিয়াবাড়ি ত্রিপুরা পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা বলেন, “এই পৌষেই পাহাড়ি এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। এ শীতে পাহাড়ে বসবাস কঠিন। তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এ সময়ে কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে আসলে আমরা বেঁচে যেতাম। প্রতিদিনই আমরা শীতবস্ত্রের অপেক্ষায় থাকি। কেউই আসছে না। শীতবস্ত্রের অভাবে পাহাড়িদের মাঝে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জরুরীভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র প্রয়োজন।”
জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি এসব কথা বলেন।
হবিগঞ্জ জেলার বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে পাহাড়। শত শত বছর ধরে এ পাহাড়ে বসবাস করে আসছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও ছিন্নমূল লোকজন। পাহাড়ি বাসিন্দারা পতিত জমিতে লেবু, কাঁঠাল, সবজি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্নফসল চাষ করে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। আর চা বাগানের বাসিন্দারা চা-পাতা উত্তোলনের সাথে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু এ শীতে দরিদ্র পাহাড়িদের পর্যাপ্ত পমিাণে শীতবস্ত্র না থাকায় তারা দুর্ভোগে পড়েছে।
পরিবেশপ্রেমিক গাজীউর রহমান সাজু বলেন, “গ্রামগঞ্জে শীতের প্রকোপ যেমন। তার চেয়ে পাহাড়ে শীত বহুগুণে তীব্র। এ কারণে পাহাড়িদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শীতের প্রকোপে তারা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ সময়ে তাদের খাবারের চেয়ে শীত নিবারণে গরম কাপড়ই বেশি প্রয়োজন। উপযুক্ত সময়ে পাহাড়িদের পাশে তেমন কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে দাঁড়াননি। পাহাড়ি শীতার্তরা শীতবস্ত্রের অপেক্ষায়। দ্রুত তাদের চাই শীতবস্ত্র।”
“একইভাবে জেলায় পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চা-বাগানে দরিদ্র শ্রমিকরাও শীত নিবারণে শীতবস্ত্র কামনা করছেন। কিন্তু তারাও সময়মত শীতবস্ত্র পাচ্ছে না”, বলেন তিনি।
কালেঙ্গা পাহাড়ের কৃষ্ণছড়া পুঞ্জির হেডম্যান উমেশ খাড়িয়া বলেন, “পাহাড়ে শীত বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় শীতবস্ত্রের খুবই অভাব। এ কারণে শিশু, নারী ও বয়স্করা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতবস্ত্র পেলে তাদের বিরাট উপকার হতো।”
তিনি জানান, কৃষ্ণছড়া, কালিয়াবাড়ি ছাড়াও চুনারুঘাট, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পুঞ্জি। এসবের অনেক পুঞ্জিতেও বসবাসকারী দরিদ্রদের জন্য শীতবস্ত্র প্রয়োজন।
দেউন্দি বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিক ভাসানী চৌহান ও কমলা গোয়ালা বলেন, “শীত বেড়েই চলেছে। এ কারণে শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। শীতের সকালে কাজে যেতে হচ্ছে। তারমধ্যে আবার শীতবস্ত্র নেই। আমাদের ন্যায় শত শত শ্রমিকের শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে। এখানে যদি কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে আসতেন, তাহলে আমাদের শীত নিবারণে বিরাট উপকার হতো।”
মানবাধিকার কর্মী জামাল আহমেদ বলেন, “শহরের শীতের চেয়ে পাহাড়ে শীতের তীব্রতা বেশি। পাহাড়িদের কাছে দ্রুত শীতবস্ত্র পৌঁছানো জরুরী।”
শুধু সরকারিভাবে নয় সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্রজনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি আহবান জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “শীত মানুষকে কাবু করেছে। এ সময়ে গরম কাপড় অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই সময়মত শীতবস্ত্র গ্রাম, শহর ও পাহাড়িদের কাছে পৌঁছাতে হবে।”
ঢাকা/মামুন/টিপু