তীব্র শীতে গাইবান্ধার জনজীবন বিপর্যস্ত
গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে উত্তরের মানুষ। মিলছে না সূর্যের দেখা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হলেই বাড়ছে শীতের প্রকোপ। রাতভর ঝরছে কুয়াশা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা গাইবান্ধার মানুষের জীবন।
গত তিনদিন ধরে সুর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে কনকনে শীত ও হিমেল বাতাস। এমন হাড়কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ দরিদ্র মানুষ। অচল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেইসঙ্গে সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় কনকনে ঠান্ডা বাতাস।
সরকারি হিসেবে গাইবান্ধায় মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ দরিদ্র। পশ্চাৎপদ ও নদীবেষ্টিত এ অঞ্চলে শীতকালীন পরিস্থিতি ভয়াবহ। তীব্র এই শীতে গৃহহীন, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিসহ কষ্ট। এখনো সব এলাকার মানুষের কাছে সরকারি কম্বল না পাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
বেশ কয়েকদিন ধরে বয়ে চলা ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। শীতের এ তীব্রতা দুই একদিনের মধ্যে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
নদী তীরবর্তী বেশিরভাগ এলাকার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। শীতের এই হানা প্রভাব ফেলেছে কৃষকের ধানের বীজতলাতেও।
গাইবান্ধা শহরের মোটরসাইকেলের চালক ফয়সাল রহমান। তিনি বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে খুব শীত। মোটরসাইকেল চালাতে খুবই কষ্ট হয়। সন্ধ্যার পর গ্রামের রাস্তায় এত কুয়াশা পড়ে, সামনের কিছুই দেখা যায় না। সঙ্গে তীব্র ঠান্ডা বাতাস একেবারে কাবু করে ফেলেছে।’’
সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে যে শীত পড়ছে, তাতে আমাদের কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ধানের বীজতলা ঘনকুয়াশায় হলুদ রঙ ধারণ করছে। এভাবে চলতে থাকলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’’
সদর উপজেলার কুমারপাড়া বাজারের ছোট মুদি দোকান চালান ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘‘পেটের দায়ে পরিবারের জন্য শীতের মধ্যেও দোকান খুলতে হয়। শীতে বিক্রি একেবারেই নেই। উপায় নাই, কাজ করি খাওয়া লাগবে, তাই বের হইছি।’’
খোলাহাটি ইউনিয়নের দশানি গ্রামের অটোরিকশা চালক জিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘এবারের শীতে হাত-পা ব্যথা করে। গাড়ি চালানোর সময় দুই হাত মনে হয় অবশ হয়ে যায়।’’
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কাউন্সিলের বাজার এলাকার ভ্যানচালক খবির উদ্দিন শহরে এসেছিলেন ভাড়া নিয়ে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘ঠান্ডার কারণে রাস্তায় মানুষ কম বের হচ্ছে। আগে সারা দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কামাই (আয়) হতো। এখন ৩০০ টাকাও হয় না। ঠান্ডায় গাড়ি চালানোও খুব কষ্ট।’’
রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকে তাপমাত্রা আবারও কমতে শুরু করেছে। আজ সকালে গাইবান্ধার তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি থাকলেও দুপুরের দিকে তাপমাত্রা বেড়ে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি হয়েছে। আগামী ৯ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে বলেও জানান তিনি।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘‘উপজেলার জন্য এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ কম্বল পেয়েছি। এগুলো বিতরণ করা হয়েছে। এখানে চাহিদা অনেক বেশি।’’
গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান বলেন, ‘‘উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের জন্য এখন পর্যন্ত দুই ধাপে ২ হাজার ৬৫০টি কম্বল পেয়েছি। স্থানীয়রা ছাড়াও বিভিন্ন এতিমখানায় এসব কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত থাকবে।’’
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পূনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, জেলার সাত উপজেলার শীতার্ত ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য নগদ ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার কম্বল উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
ঢাকা/মাসুম/বকুল