ঢাকা     রোববার   ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২১ ১৪৩১

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের ১৫ কর্মচারীকে অব্যাহতি, জানে না কর্তৃপক্ষ!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৩ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১০:০০, ৩ জানুয়ারি ২০২৫
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের ১৫ কর্মচারীকে অব্যাহতি, জানে না কর্তৃপক্ষ!

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে কর্মরত বিভিন্ন পদের ১৫ জনকে কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মচারীরা আউটসোর্সিংয়ে গত ২০২২ সালে হাসপাতালটিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। 

তবে অব্যাহতির বিষয়ে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস।

গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে কর্মরত ল্যাব এটেনডেন্ট, ওয়ার্ড বয়, ইলেট্রিশিয়ান, বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরী পদের ১৫জনকে অব্যাহতি দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড।

অব্যাহতির চিঠিতে বলা হয়েছে, “টাঙ্গাইল মেডিকেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন পদবীর ৯০ জন জনবল সরবরাহ করা জনবলের মধ্যে নিম্নে বর্ণিত পদবীর ১৫ জনকে জনবল বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মিটিং মিছিলের সাথে জড়িত থাকায় তাদের নিয়োগপত্রের ৩নং শর্তাবলী অনুযায়ী অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাদের নিয়োগপত্র বাতিল করা হইল।”

অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়ায় তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের নিয়োগের শর্তানুযায়ী ১৬ হাজার ১৩০ টাকা বেতনের মধ্যে দেওয়া হতো ১০ হাজার করে। সর্বশেষ বিগত ৫ মাসে ১২ হাজার টাকা করে দিয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীরা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় নিয়োগ পাওয়া এখনও অনেকেই কর্মরত রয়েছে, শুধুমাত্র এই ১৫ জনকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে। অথচ কেউ কোন দল বা মিছিল মিটিং করেনি, কোন খারাপ রেকর্ডও নেই। পর্যায়ক্রমে নিয়োগ পাওয়া ৯০ জনকেই চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে শুনেছি। পরে নতুন করে অন্যদলের লোকজন নিয়োগ দিবে তাদের মত করে। বর্তমানে বিএনপির দুই নেতা হাসপাতালে লোকবল নিয়োগের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন বলে শুনেছি। অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজন ওই বিএনপির নেতাদের সাথে যোগাযোগ করছে চাকরি ফেরত পাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা অন্যদের নিয়োগ দিয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পাপিয়া আক্তার বলেন, “কর্মচারীদের একটি গ্রুপে অব্যাহতির ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরে সুপার ভাইজার গ্রুপে অব্যাহতি পাওয়া ১৫ জনকে হাসপাতালে আসতে নিষেধ করেন। আওয়ামী লীগের সময় নিয়োগ পাওয়ায় নাকি আমাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরাতো কোন দল করিনা। কোন কারণ ছাড়াই এমন চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। কোম্পানী থেকেও কিছু বলা হয়নি। অব্যাহতির চিঠিটা আদৌ সঠিক কিনা আমরা জানিনা। আমাদের অনেকেই এখনও হাসপাতালে ডিউটি করছেন।”

ওয়ার্ড বয় মেরিনা বলেন, “৬ মাসের বেতন বকেয়া ছিল। কোম্পানি ৫ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। প্রথমে ১০ হাজার করে বেতন দিতো কিন্তু অব্যাহতি দেওয়ার আগে দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করে বেতন দিয়েছে। অথচ শর্তানুযায়ী বেতন দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার ১৩০ টাকা করে।”

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ভাইজার আল আমিন বলেন, “অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে মিছিল মিটিং করা, চাকরির কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।”

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার মো. জিলান বলেন, “অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের সময় রাজনৈতিক প্রোগ্রামে মিছিল মিটিং করেছে। সুপার ভাইজারের দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা, আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি আমরা জানিনা। এই বিষয়ে কোন চিঠি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়নি।” 

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর সম্প্রতি টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে নামকরণ করা হয়।

ঢাকা/কাওছার/টিপু 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়