৪২ লাখেও মুক্তি মেলেনি, লাশ নিতে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি
মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আসাদের মৃত্যুর খবরে পরিবারে শোকের মাতম বইছে (ইনসেটে আসাদ)
উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দুই বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিল মাদারীপুর ডাসার উপজেলার পশ্চিম কমলাপুর গ্রামের আসাদ মাতুব্বর (৩৮)। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো আসাদের।
বুধবার (২ জানুয়ারি) সকালে পরিবারের কাছে খবর আসে আসাদ আর বেঁচে নেই। আসাদের মৃত্যুর খবরে পরিবারে শোকের মাতম বইছে। আসাদের মা-বাবা স্ত্রী সন্তানদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
পরিবারের দাবি, দালালরা অমানসিক নির্যাতন করে আসাদকে মেরে ফেলেছে। শুধু মেরেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, মরদেহ ফেরত দিতেও চাইছে মোটা অংকের টাকা। দালাল রুবেলের বিচারসহ নিহত আসাদের লাশ বাংলাদেশে ফেরত চেয়েছেন স্বজনরা।
আসাদের পরিবার জানায়, লিবিয়া যাওয়ার পর আসাদ বন্দি হয় মাফিয়ার হাতে। কয়েক ধাপে ৪২ লাখ টাকা নিয়েও মুক্তি মেলেনি তার। দুই বছর আগে আসাদ মাতুব্বরের সাথে সদর উপজেলার ঝিকরহাট গ্রামের স্থানীয় দালাল রুবেল খানের মধ্যে ১৭ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। তবে লিবিয়াতে পৌঁছানোর পরেই টাকার জন্য দালাল চক্র একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।এমনকি নির্যাতন করার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে কয়েক দফায় আসাদের পরিবারের কাছ থেকে নগদ এবং ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ লক্ষ টাকা নেয় দালাল চক্র। লিবিয়ায় বন্দি থেকেও পরিবারের সাথে প্রতিদিন যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন আসাদ। হঠাৎ লিবিয়া থেকে বুধবার সকালে ফোন আসে আসাদ মারা গেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি আসাদকে টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন দালাল রুবেল ও তার সহযোগিরা।
নিহতের স্ত্রী রাখি আক্তার বলেন, “আমার স্বামীকে টাকার জন্য দালালরা মেরে ফেলেছে। আমি সেদিন সকালে কথা বলেছি স্বামীর সাথে সন্ধ্যায় দালালরা খবর দিয়েছে আমার স্বামী মারা গেছে। আমি ভিডিও কলে লাশ দেখতে চাইলে লাশও দেখায়নি। আমি দালালের বিচার চাই।”
বুধবার দেখা গেছে, বাড়িভর্তি মানুষ। সবার চোখে পানি। বাড়ির আঙিনায় আসাদের মা, স্ত্রী-দুই ছেলে, ভাইবোনসহ স্বজনেরা আহাজারি করছেন। প্রতিবেশী কেউ কেউ তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পুরো বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
ছেলের মরদেহ ফেরত পেতে চান নিহত আসাদের মা কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, “মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে দালালরা। আমরা লাশ ফেরত চাই। তবে লাশ নিতে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেছে দালাল রুবেল ও তার সহযোগীরা। আমরা দালালের বিচার চাই।”
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহ মো. সজীব বলেন, “মাদারীপুরে মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে। তাই স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার আহবান জানাই। পরিবারের পক্ষ থেকে মরদেহ দেশে আনার আবেদন করলে প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।”
ঢাকা/বেলাল/টিপু