জমি নিয়ে বিরোধ
গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল নারীকে মারধর, ঘরে আগুন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাজাহার ইউনিয়নে বিরাট বরট্ট গ্রামে আগুনে পুড়ে যাওয়া ফিলোমিনা হাসদার ঘরের ভেতরের চিত্র।
জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সাঁওতাল নারীকে মারধর ও তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আহত নারীর নাম ফিলোমিনা হাসদা (৫২)। বর্তমানে আহত ওই নারী শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের বিরাট বরট্ট (আদিবাসীপাড়া) গ্রামের সুন্দর মণ্ডলের স্ত্রী। অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম একই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রাজাহার ইউনিয়নের বিরাট বরট্ট গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজনের সঙ্গে ফিলোমিনা হাসদার পরিবারের প্রথমে বাকবিতণ্ডা, পরে সংঘর্ষ হয়। এতে ফিলোমিনা হাসদা নামের এক সাঁওতাল নারী কানে আঘাত পেয়ে আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান আরো জানান, চেয়ারম্যান রফিকুলের ভাষ্য অনুযায়ী; ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিক তিনি। আর যে জমিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে, তার পরিমাণ ১৬ শতাংশ। ওইদিন সকালে সেখানে জমিমালিক রফিকুল মাটিভরাট শুরু করেন। এতে প্রথমে বাধা দেন ফিলোমিনা হাসদার বোনের ছেলে নিকোলাস মুর্মু। খবর পেয়ে ফিলোমিনার ছেলে ব্রিটিশ সরেনসহ পরিবারের অন্যান্যরাও বাধা দেন। এরপরই মূলত সংঘর্ষ হয়। পরে রাতে জানতে পারি, কে বা কারা ফিলোমিনা হাসদার ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসার আগেই স্থানীয়রা আগুন নেভান।
তবে ফিলোমিনা হাসদার পরিবারের দাবি, এসব জমি তাদের বাপ-দাদার। ভুয়া ও জাল দলিল করে রফিকুল চেয়ারম্যান এই জমি ভোগদখল করার পাঁয়তারা করছেন।
এ ঘটনায় আহত ফিলোমিনা হাসদার বড় ছেলে জুলিয়াস সরেন বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
আহত ফিলোমিনা হাসদার বড় ছেলে জুলিয়াস সরেন বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের পাপ-দাদার জমিতে মাটিভরাট করতে আসেন। আমরা বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমার মা ও খালাতো ভাই নিকোলাস সরেন আহত হন। নিকোলাস প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তারা আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়। চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি।’’
গোবিন্দগঞ্জ বাগদা-ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ‘‘ওই (রাজাবিরাট) এলাকায় সাঁওতালদের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি ছিল। স্থানীয় বাঙালিরা বিভিন্ন ভুয়া ও জাল দলিল করে সেগুলো নিজেদের দখলে নিয়েছেন। সেখানে একটি মাদ্রাসাসহ ৪০-৫০টি নতুন বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। যে কারণে বহু সাঁওতাল পরিবার অন্যত্র ঘর তুলে বসবাস করছেন।’’
ফিলিমন বাস্কে আরো বলেন, ‘‘সাঁওতাল পরিবারের ওপর হামলায় দুজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন ফিলোমিনা হাসদা ও তার ভাগ্নে নিকোলাস মুর্মু। রাতে তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলেও খবর পেয়েছি। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’’
সাঁওতালদের জমি দখল, মারপিট ও আগুন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রায় এক যুগ আগে স্থানীয় এক বাঙালির কাছ থেকে আমি ১৬ শতাংশ জমি কিনি। এখন সেখানে মাটিভরাট করার কাজ শুরু করলে প্রথমে নিকোলাস মুর্মু আমার লোকজনকে বাধা দেয়। পরে আমি উপস্থিত হয়ে রাগ করে তাদের কিছু কথা বলেছি। আমি কোনো নারীর গায়ে হাত তুলিনি। বরং, আমার পরনের কাপড় টেনে খুলে আমাকে তারা অপদস্থ করেছে। তাদের বাড়িতে কে বা কারা আগুন দিয়েছে, আমি জানি না। আগুন দেওয়ার খবর লোকমুখে শুনেছি।’’
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহত সাঁওতাল নারীর বড় ছেলে জুলিয়াস সরেন বাদী হয়ে চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের নামে মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’’
মাসুম/এনএইচ