মুন্সীগঞ্জে আলুগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিক
শেখ মোহাম্মদ রতন || রাইজিংবিডি.কম
মুন্সীগঞ্জে আলুর ভালো ফলনের আশায় জেলার ছয়টি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপণ করা আলু ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও শ্রমিকরা।
শনিবার (৫ জানুয়ারি) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা নদী ঘেঁষা হাসাইল গ্রামের কৃষি জমির পাশেই আলুর বস্তা (ছালা) শরীরের নিচে-ওপরে দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে এক শিশু। কনকনে শীতের শীতল হাওয়া থেকে নিরাপদ রাখতে শিশু সন্তানকে জমির পাশেই খালি জায়গায় ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন নারী শ্রমিক রহিমা বেগম।
পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে পদ্মার তীরের হাসাইল গ্রামের কৃষি জমিতে রোপণ করা আলু গাছ পরিচর্যার কাজ করছে নারী শ্রমিকরাও। সেই নারী শ্রমিকদের একজন রহিমা বেগম। জমিতে পরিচর্যার কাজ করার সময় তার ছেলে শিশু সন্তান ঘুমিয়ে পড়লে তাকে এভাবেই ঘুম পাড়িয়ে রেখে কাজ করছেন তিনি।
কৃষি জমিতে কথা হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের সঙ্গে। নারী শ্রমিক কাজলী দাস বলেন, “পুরুষ শ্রমিকদের মতো তারা একই পরিশ্রম করছেন। কিন্তু তাদের মজুরি ৪৫০ টাকা আর পুরুষ শ্রমিকদের মজুরী ৫৫০ টাকা। আর স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা।”
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জে কৃষকের আলু গাছ পরিচর্যার কাজে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের প্রায় লক্ষাধিক পুরুষ ও নারী শ্রমিক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। জেলার ৬টি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপণ করা আলু জমির পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন সবুজের সমারোহ দেখা গেছে। কৃষককুল পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের নিয়ে গজিয়ে ওঠা আলু গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
টঙ্গিবাড়ীর ধামারণ গ্রামের কৃষক সাহাবুদ্দিন হাওলাদার জানান, এবারো ৬শ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আলু উত্তোলন শুরু হবে। তাই গজিয়ে ওঠা গাছ দেখে আলুর ফলন ভালো হবে মনে করে আশায় বুক বেঁধেছেন।
সদর উপজেলার পূর্ব মাকহাটী গ্রামে কৃষি জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিক মুক্তার ও মাসুম মিয়া। তারা জানালেন, ভালো ফলনের আশায় কৃষকের আলু গাছ পরিচর্যায় জনপ্রতি ৫শ টাকা মজুরিতে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।
সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের টরকী গ্রামের আলু চাষি মো. নূর বলেন, “এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি। এখন গাছ গজিয়ে ওঠায় তা পরিচর্যা করতে নারী শ্রমিকরা জমিতে কাজ করছে।”
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলেই রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা আলু রোপণ কাজে যুক্ত হতে প্রতিদিন সকালে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জড়ো হচ্ছেন। কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর তারা আলু রোপণে জমিতে কাজ শুরু করে দিচ্ছেন।
রংপুর থেকে আসা শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী আবার কোথাও দিনব্যাপী মজুরী নিয়ে তারা কৃষকের জমির আলু গাছ পরিচর্যা করছেন। শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরী পাওয়ায় তারাও খুশীতে কনকনে শীতের মধ্যে আগাছা পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, এ মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন।
তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়। জেলায় ৭৮ হাজার কৃষক পরিবারের ৪ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।
ঢাকা/রতন/ইমন