গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সাংবাদিকদের সভা, একগুচ্ছ সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ
চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সাংবাদিকরা বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের ৮টি জেলার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, “গণমাধ্যমের রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করা দরকার। রাজনৈতিক দলীয় আদর্শে দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে প্রভাবিত করা যাবে না। সারা দেশে পত্রিকাগুলোতে যাতে একটি জাতীয় সম্পাদকীয় নীতি থাকে, তার জন্য সম্পাদক পরিষদকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে ৪৬টি টেলিভিশন চলার মতো বাজার নেই। অথচ বিগত সরকারের আমলে টেলিভিশন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সংবাদপত্রকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য থাকবে সংবাদ প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।”
কমিশন প্রধান বলেন, “বর্তমানে আমাদের সম্পাদকীয় নীতিমালা নেই। সারা দেশে সম্পাদকীয় মান অভিন্ন ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড থাকা উচিত, সব প্রতিষ্ঠান মেনে চলবে ন্যূনতম সাংবাদিকতার নৈতিকতার দিকগুলো- সেরকম কোনো কিছু নেই। সেটার জন্য আমরা সম্পাদক পরিষদকে বলেছি।”
কামাল আহমেদ বলেন, “আমাদের দেশে একই মিডিয়া হাউসকে টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল, প্রিন্ট ভার্সন বা অনলাইন রেডিওর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে একই খবর ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এতে পাঠক ভিন্ন কোনো মত বা বৈচিত্র পাচ্ছেন না। এগুলোর সমাধান আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আপনারা আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত https://mrc.portal.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মতামত বা সুপারিশ কমিশনের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। আপনাদের প্রেরিত মতামত বিবেচনা করে কিভাবে গণমাধ্যমে সংস্কার আনা যায় এ বিষয়ে কমিশন সুপারিশ পেশ করবে।”
মফস্বল সাংবাদিকদের বেতনকাঠামো নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ন্যূনতম একটি কাঠামো ঠিক করে দিলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা তাদের কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী বেতন পাবেন। আর সম্পাদক হওয়ার নীতিমালা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। ভাইকে-ছেলেকে সম্পাদক করে দেওয়া হচ্ছে। প্রকাশনা সংখ্যা নিয়েও নীতিমালা আছে, তবে সরকারি কর্মকর্তা ওপরের চাপে সেটি মানেন না।”
সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কাছে সাংবাদিকরা যেসব সুপারিশ তুলে ধরেন সেগুলো হলো- সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত থেকে সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত রাখতে হবে। বিগত বছরে যেসব সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। গত ১৫ বছরে যেসব ভুয়া পত্রিকা নিবন্ধিত হয়ে ডিএফপি’র তালিকাভুক্ত হয়েছে সেগুলোকে বাদ দিতে হবে। পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগদান করতে হলে সাংবাদিকতায় কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বা সাংবাদিকতায় পেশাগত ডিগ্রি থাকতে হবে। উপজেলা এবং মফস্বল এলাকার প্রেসক্লাব সভাপতি ও সম্পাদককে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য নির্বাচিত করা এবং মফস্বল সাংবাদিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে সাংবাদিক লেখা স্টিকার ব্যবহার করে ভুয়া সাংবাদিকরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে আসছে, এসব ভুয়া সাংবাদিকতা বন্ধের নিমিত্তে প্রেস ইনিস্টিটিউটে ডিপ্লোমা চালুকরণ বা সাংবাদিকদের মান উন্নয়নের জন্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাংবাদিকদের একক রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান ও তাদের সরকারি পরিচিতি নিশ্চিত করতে হবে। ফলে একজনের একাধিকবার সরকারি সুবিধা প্রাপ্তি বন্ধ হবে। পাশাপাশি তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) তত্ত্বাবধানে সাংবাদিকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ জন্য পিআইডিকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনলে সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে।
সভায় কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, আখতার হোসেন খান, বেগম কামরুন্নেসা হাসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোস্তফা সবুজ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম পিআইডির উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো. সাঈদ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ