কুমিল্লায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ, হাসপাতালে দ্বিগুণ রোগী
রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে
কুমিল্লায় শীত বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এতে হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়ছে।
আজ সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। উপজেলার হাসপাতালেও একই চিত্র। রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসকেরা হিমশিম খাচ্ছেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক নবজাতক ও শিশু ভর্তি রয়েছে। এ সব শিশুর মধ্যে কেউ কাশি, কেউ নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। নবজাতকদের অবস্থা গুরুতর।
রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি ৫০০ বেডের এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ, মেডিসিন ও শিশু বিভাগে। ৪০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডা ছাড়াও শিশুরোগ নিয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি আছে। একই অবস্থা হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডেও। বেড সংকটে রোগীদের বারান্দা এবং ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। একে তো রোগীর চাপ, তার উপর শিশু রোগীর সঙ্গে স্বজনদের ভিড় থাকায় সমস্যা প্রকট হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের তীব্রতায় এ সময় শিশু ও বয়স্কদের জ্বর, নিউমোনিয়া, সাইনাস, টনসিলাইটিস, এ্যাজমা, এলার্জিজনিত সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। শিশুরা সাধারণ জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছে।
ফেনী থেকে আসা শিশু আবু রায়হান সপ্তাহখানেক কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগছে। রায়হান শুরুতে জ্বরে আক্রান্ত হয়। তার মা রিতা আক্তার বলেন, ‘‘স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ালেও অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। হাসপাতালে প্রয়োজীয় চিকিৎসা পাওয়ায় বর্তমানে সুস্থতার দিকে। তবে রোগীর চাপের কারণে বেড না পাওয়ায় ফ্লোরে কাটাতে হচ্ছে।’’
চৌদ্দগ্রামের ১৬ বছরে আবুল বাশার বলেন, ‘‘শীতে ঠান্ডাজনতি রোগে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছি। জ্বর, সর্দি, কাশি থেকে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আমি এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ছিলাম জানতাম না। এ্যাজমা থাকায় ঠান্ডা রোগগুলো থেকে সুস্থ হচ্ছিলাম না।’’
এ বিষয় জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মিয়া মনজুর আহমেদ বলেন, ‘‘শীতের সময় শিশুদের ঠান্ডা লাগানো যাবে না। প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের ঘরের বাইরে না নেওয়ায় ভালো। ঠান্ডা খাবার খাবে না, উষ্ণ পানিতে গোসল দিতে হবে এবং শিশুদের বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শীতের এই সময়টাতে বাইরে ধুলাবালি বেশি থাকে, ফলে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তারা দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়। ফলে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের সতর্ক থাকতে হবে।’’ পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টিকর খাবার এবং উষ্ণ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন রেজা মুহাম্মদ সারওয়ার আকবর জানান, কয়েক দিনে ঠান্ডাজড়িত রোগী বাড়ছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ ও জনবল রয়েছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা/বকুল